সর্ব্বধর্ম্ম পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং তাং সর্ব্ব পাপেভ্য মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ। —গীতা ১৮/৬৬।।
অহং তাং সর্ব্ব পাপেভ্য মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ। —গীতা ১৮/৬৬।।
★বিস্তারিত ব্যখ্যা করেছেন
→ স্বামী প্রণবানন্দ গিরি পরমহংস।।
→ স্বামী প্রণবানন্দ গিরি পরমহংস।।
"ধর্ম্ম" —এটি সংস্কৃত ভাষার একটি বহুবিস্তৃতার্থ সম্পন্ন শব্দ ; ইহা ক্রমে বিস্তার -অর্থ থেকে বিশেষ বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়ে এসেছে। "ধৃ" ধাতু মন প্রত্যয় করে ধর্ম্ম শব্দটি সিদ্ধ হয়েছে। ধাতুগত অর্থে যা’ ধরে থাকা যায় তাই ধর্ম এইরূপ অর্থ হয়।
এই অর্থে (১ম অর্থে) স্বয়ং আদিপুরুষ সৃষ্টিকর্তা বিধাতাই ধর্ম্ম, কারণ তাকে ধরে থেকেই এই বিশ্ব রয়েছে। কাজেই (২য় অর্থ) এই বিশ্ব ব্যপার পরিচালনার জন্য যে বিধান তিনি করেছেন, অর্থাৎ যে বিধান ধরে বিশ্বের ক্রিয়া চলছে, তাহাও ধর্ম্ম (বিশ্ব বিধান)। তেমনি (৩য় অর্থ) সেই বিধাতৃপুরুষ জীবের. বিশেষতঃ মনুষ্যের কর্ম্ম ও কর্ম্মফল সম্বন্ধীয় যা বিধান করেছেন, যা’ দ্বারা পাপ ও পূণ্য নামে দু’প্রকার কর্ম্মফল বিভাগ করা হয়েছে, তাকেও ধর্ম বলে! আবার (৪র্থ অর্থ) পূণ্যফলে জীব ক্রমে নিকটবর্তী হয়ে স্বয়ং ধর্ম্মের (বিশ্ব বিধাতার) স্বরূপ প্রাপ্ত হয় বলে পূণ্যকেও ধর্ম্ম বলে, এবং পাপফলে জীব ধর্ম্ম হতে ক্রমশ বহুদুরে নিক্ষিপ্ত হয় বলে, পাপ কে অধর্ম্ম বলে। এইরূপে ক্রমে (৫ম অর্থ) ধর্ম্মশাস্ত্রানুযায়ী আচার ধর্ম্ম নামে চলে এসেছে। বিধি বিহিত বিধানের নাম ধর্ম্ম বলে সেই অনুকরণে (৬ষ্ঠ অর্থ) সামাজিক ব্যবহারিক বিধানকেও ধর্ম্ম বলা হয় ; এই জন্যই স্মৃতি প্রভৃতি ব্যবহার শাস্ত্রকে ধর্ম্মশাস্ত্র বলে। (৭ম অর্থ) বিশেষ বিশেষ বিধানকেও ধর্ম্ম বলে ; যেমন বীরধর্ম্ম, রাজধর্ম, গার্হস্থ্যধর্ম্ম, সন্ন্যাসধর্ম্ম, পতিব্রত্যধর্ম্ম ইত্যাদি।
এই অর্থে (১ম অর্থে) স্বয়ং আদিপুরুষ সৃষ্টিকর্তা বিধাতাই ধর্ম্ম, কারণ তাকে ধরে থেকেই এই বিশ্ব রয়েছে। কাজেই (২য় অর্থ) এই বিশ্ব ব্যপার পরিচালনার জন্য যে বিধান তিনি করেছেন, অর্থাৎ যে বিধান ধরে বিশ্বের ক্রিয়া চলছে, তাহাও ধর্ম্ম (বিশ্ব বিধান)। তেমনি (৩য় অর্থ) সেই বিধাতৃপুরুষ জীবের. বিশেষতঃ মনুষ্যের কর্ম্ম ও কর্ম্মফল সম্বন্ধীয় যা বিধান করেছেন, যা’ দ্বারা পাপ ও পূণ্য নামে দু’প্রকার কর্ম্মফল বিভাগ করা হয়েছে, তাকেও ধর্ম বলে! আবার (৪র্থ অর্থ) পূণ্যফলে জীব ক্রমে নিকটবর্তী হয়ে স্বয়ং ধর্ম্মের (বিশ্ব বিধাতার) স্বরূপ প্রাপ্ত হয় বলে পূণ্যকেও ধর্ম্ম বলে, এবং পাপফলে জীব ধর্ম্ম হতে ক্রমশ বহুদুরে নিক্ষিপ্ত হয় বলে, পাপ কে অধর্ম্ম বলে। এইরূপে ক্রমে (৫ম অর্থ) ধর্ম্মশাস্ত্রানুযায়ী আচার ধর্ম্ম নামে চলে এসেছে। বিধি বিহিত বিধানের নাম ধর্ম্ম বলে সেই অনুকরণে (৬ষ্ঠ অর্থ) সামাজিক ব্যবহারিক বিধানকেও ধর্ম্ম বলা হয় ; এই জন্যই স্মৃতি প্রভৃতি ব্যবহার শাস্ত্রকে ধর্ম্মশাস্ত্র বলে। (৭ম অর্থ) বিশেষ বিশেষ বিধানকেও ধর্ম্ম বলে ; যেমন বীরধর্ম্ম, রাজধর্ম, গার্হস্থ্যধর্ম্ম, সন্ন্যাসধর্ম্ম, পতিব্রত্যধর্ম্ম ইত্যাদি।
এই গেল ধর্ম্ম শব্দের মানে। যা’ ধরে থাকা যায় এই আদিম অর্থ মূলে ধর্ম্মশব্দ স্বভাব, গুণ কর্তব্যকর্ম্ম ইত্যাদি নানাপ্রকার বিশেষ বিশেষ অর্থেও প্রযুক্ত হয়, যেমন স্বভাব অর্থে ;—জীবধর্ম্ম, মনুষ্যধর্ম্ম স্ত্রী ধর্ম্ম, পুরুষধর্ম্ম মনোধর্ম্ম ইত্যাদি ; গূণ অর্থে ;—বায়ুর ধর্ম, জলের ধর্ম ইত্যাদি প্রত্যেক বস্তুর গুণের নাম ধর্ম্ম।
সর্ব্বধর্ম পরিত্যজ্য ......এই শ্লোকে এই যে সর্ব্বধর্ম শব্দটি আছে, এর অর্থ একটু বিশেষ করে বুঝতে হবে। এর লৌকিক অর্থ এখনে আলোচনা করা হবে।
অর্জুন প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন "এই আততায়িদের হত্যা করলে আমাদের কুলক্ষয় জনিত পাপ হবে, সনাতন কুলধর্ম্ম নষ্ট হবে, ধর্ম্ম নষ্টে অধর্ম্ম বাড়বে, তাতে শাশ্বত জাতিধর্ম্ম ও কুলধর্ম্ম উৎসন্ন যাবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলেছেন 'আমি ধর্ম্মসংমুঢ়চেতা হয়েছি আমি তোমার শিষ্য, যা শ্রেয়ঃ তাই আমাকে উপদেশ কর। অর্জুনের ভাব হচ্ছে যে, গুরু জাতি মিত্র বধে তাঁদের ধর্ম্ম অর্থাৎ পূণ্য ক্ষয় হয়ে পাপ হবে, আর কুলধর্ম্ম ও জাতিধর্ম্ম উৎসন্ন হওয়াতে পাপ তাঁদেরই আসবে। ভগবান শিষ্য অর্জুনের ধর্ম্ম -লোপাশঙ্কা এবং পাপভয় দূর তাঁর পরম কল্যাণ সাধনের জন্য বলেছেন "সর্ব্বধর্মান্ পরিত্যজ্য "—সমুদয় ধর্ম্ম অর্থাৎ পাপ পূণ্য সিদ্ধান্ত কারক যে সব বিধান আছে কুল রক্ষার যে বিধান (কুলধর্ম্ম) আছে, এবং জাতি রক্ষার যে বিধান (জাতিধর্ম্ম) আছে, আরও যে সব ধর্ম্ম পালনার্থে তুমি কাতর হয়েছ, সেই সব সম্বন্ধীয় সব ধর্ম্ম সব বিধান —সবব রকম বিধিনিষেধ ত্যাগ করে, "মামেকং শরণং ব্রজ" —একমাত্র আমার শরণ লও অর্থাৎ আমি তোমার গুরু গুরুবাক্যই ধর্ম্ম সেই আমার বাক্য অনুসারে, আমি যেরূপ কাজ করতে উপদেশ দিলাম একমাত্র সেই উপদেশ অনুসারে সেই আমার "সর্ব্বকর্ম্মণা তমভর্চ্চ্য" ইত্যাদি এবং তমেব শরণং গচ্ছ ইত্যাদি বাক্য মতে কর্ম্ম কর। তুমি যতপ্রকার পাপের আশঙ্কা ও ভয় করছো সেই সমুদয় পাপ থেকে আমি তোমায় মুক্ত করবো — আমি তোমার সকল প্রকার কর্ম্মবন্ধন মোচন করবো। আর শোক করো না —পাপগ্রস্থ হবে এ আশঙ্কা করে আর বিষন্ন হয়ো না।
এই হলো —"সর্ব্বধর্ম্ম পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ" এর লৌকিক অর্থ।
courtesy Bidyut Ar
courtesy Bidyut Ar
No comments:
Post a Comment