ॐ सभा-য় আপনাদের জানাই স্বাগতম <> Facebook Page www.facebook.com/omsabha <> Facebook Group www.facebook.com/groups/OmSabha <> Blog,Page,Group থেকে বিনা অনুমতিতে লেখা নিলে আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। <> সকল স্বত্ব ॐ सभा -র দ্বারা সংরক্ষিত ।

Saturday, September 22, 2012

শ্রী শ্রী রাধা অষ্টমী


শ্রী শ্রী রাধা অষ্টমী





বৈশ্য কুলোদ্ভব বৃষ ভানু গোকুলের রাজা ছিলেন। পরম ধার্মিক রাজা ও তাঁর পত্নী ভগবদ নিষ্ঠ কীর্তিদা সন্তান লাভের জন্য বহু তপস্যা করেন। কিন্তু তাঁদের আশা পূর্ণ হল না। শেষে বৃন্দাবনের যমুনা তীরস্থ ৫১ সতী পীঠের অন্যতম কাত্যায়নী পীঠে বৃষ ভানু জগন্মাতার কঠোর তপস্যায় ব্রতী হন। ১০০ বছর পর দেবী আকাশবাণীর মাধ্যমে রাজাকে ভুবন মঙ্গল হরিনাম গ্রহন করে তারপর দেবী উপাসনা করতে আদেশ দেন। রাজা সে আদেশ মেনে "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে"--- এই মহামন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে আদ্যাশক্তির উপাসনায় ব্রতী হলেন। অল্পদিন পর মহাদেবী আবির্ভূত হয়ে রাজাকে এক সহস্র সূর্য তুল্য ডিম দান করলেন। রাজা এটি রানীর হাতে তুলে দেবামাত্রই সেই দিব্য ডিম হতে কোটি সূর্যের প্রভাযুক্ত ,অর্ধচন্দ্র শোভিত,বিশাল নয়না, দিব্যগন্ধ-মাল্য-অলঙ্কার ভূষিত , অষ্টভুজা রাধারানীর আবির্ভাব ঘটল।বাৎসল্য ভাবের পুষ্টির জন্য এরপর তিনি দ্বিভুজ কন্যায় পরিণত হলেন। সেই দিন টি ছিল ভাদ্র শুক্লা অষ্টমী তিথি যা ত্রিলোকে রাধাষ্টমী নামে খ্যাত হল।রাজদম্পতি ভগবতী রাধারানীর কৃপায় জানলেন যে বিশ্বেশ্বরী জগন্মাতাই তাঁর গৃহে কন্যা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।

এই পুন্য তিথিতে রাজা বৃষ ভানু কৃত রাধা স্তুতি উদ্ধৃত করে বলি," হে বিশ্বেশ্বরী, বিশ্বেশ্বর পূজিত তোমার যে পাদপদ্ম আমি সেই চরণে প্রনত হই। ব্রমহা,হরি,শিব,ইন্দ্র---এই সব মূর্তি তোমারি। তুমি ভিন্ন জগতে আর অন্য বস্তু নেই। জগত ভ্রান্তি মাত্র। হে মাতঃ, কৃপা করে আমাকে নিজ দাস জেনে অনুগ্রহ করো।"




জয় রাধে। জয় জগদম্বা।






























Thursday, September 20, 2012

রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা সীতা

রাবণ ও মন্দোদরীর  কন্যা সীতা 



বাল্মীকি রচিত অদ্ভুত রামায়ণ  -  এর বর্ণনা অনুযায়ী : রাবণ ঋষিদের হত্যা করে তাঁদের রক্ত একটি বৃহৎ কলসে সঞ্চয় করে রাখতেন। ঋষি গৃৎসমদ দেবী লক্ষ্মীকেকন্যারূপে পাওয়ার জন্য তপস্যা করছিলেন। তিনি দর্ভ ঘাস থেকে দুগ্ধ সংগ্রহ করে তা মন্ত্রপূত করে একটি পাত্রে সঞ্চয় করছিলেন যাতে লক্ষ্মী সেখানে অবতীর্ণ হতে পারেন। রাবণ এই দুগ্ধ ঋষিরক্তের কলসে ঢেলে দেন। ঋষিরক্তকে বলা হয় সকল বিষের চেয়েও বিষাক্ত। মন্দোদরী রাবণের অপকর্মে মর্মাহত হয়ে তাই এই বিষাক্ত রক্ত পান করে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রক্ত পান করার ফলে গৃৎসমদ সঞ্চিত দুগ্ধের প্রভাবে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। লক্ষ্মী তাঁর গর্ভে প্রবেশ করেন। মন্দোদরী তাঁর কন্যার ভ্রুণটি কুরুক্ষেত্রে মাটির তলায় প্রোথিত করেন। রাজা জনক তা আবিষ্কার করেন এবং কন্যার নাম রাখেন সীতা।
The Adbhuta Ramayana narrates: Ravana used to store the blood of sages he killed in a large pot. The sage Gritsamada was practicing penance to acquire the goddess Lakshmi as his daughter. He stored milk from Darbha grass and purified it with mantras in a pot so that Lakshmi would inhabit it. Ravana poured the milk from this pot into his blood pot. Mandodari is frustrated seeing the evil deeds of Ravana, so she decides to commit suicide by drinking the contents of the blood-pot, which is described to be more poisonous than poison. Instead of dying, Mandodari gets pregnant with the incarnation of Lakshmi due to the power of Gritsamada's milk. Mandodari buries the foetus in Kurukshetra, where it is discovered by Janaka, who named her Sita.

দেবীভাগবত পুরাণ  - এ বলা হয়েছে : রাবণ যখন মন্দোদরীকে বিবাহ করতে চান, তখন ময়াসুর রাবণকে সাবধান করে বলেন যে, মন্দোদরীর কোষ্ঠীতে আছে, তাঁর প্রথম সন্তান তাঁর বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। তাই এই সন্তানটিকে জন্মমাত্রই হত্যা করতে হবে। ময়াসুরের উপদেশ অগ্রাহ্য করে রাবণ মন্দোদরীর প্রথম সন্তানকে একটি ঝুড়িতে করে জনকের নগরীতে রেখে আসেন। জনক তাঁকে দেখতে পান এবং সীতারূপে পালন করেন।
The Devi Bhagavata Purana says: When Ravana wants to marry Mandodari, Maya warns him that her horoscope indicated her first-born would destroy her clan and should be killed. Ignoring Maya's advice, Ravana buries his first child by Mandodari in a casket in Janaka’s city, where it is discovered and grew up as Sita.

বাসুদেবহিন্দি, উত্তর পুরাণ  ইত্যাদি জৈন রামায়ণ এও সীতাকে রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা বলা হয়েছে। এই সব গ্রন্থেও আছে যে, সীতা রাবণ ও তাঁর বংশের ধ্বংসের কারণ হবেন বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল বলে, রাবণ তাঁকে পরিত্যাগ করেন।
Jain adaptations of the Ramayana like VasudevahindiUttara-purana, and others also state that Sita is the daughter of Ravana and Mandodari, and is abandoned when she is prophesied to be the cause of the end of Ravana and his family.

মালয় সেরি রামা ও জাভানিজ রামা কেলিং   গ্রন্থে রয়েছে,  রাবণ রামের মা মন্দোদরীকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে তাঁরই মতো দেখতে এক ছদ্ম-মন্দোদরীকে রাবণ বিবাহ করেন। রামের পিতা সেই ছদ্ম-মন্দোদরীকে সম্ভোগ করেছিলেন। তাঁর ঔরসে ছদ্ম-মন্দোদরীর গর্ভে সীতার জন্ম হয়। এইভাবে সীতা নামেমাত্র রাবণের কন্যারূপে পরিচিত হন।
In the Indonesian-Malay Seri Rama and the Indonesian-Javanese Rama Keling, Ravana wants to possess Mandodari, the mother of Rama, but instead marries a pseudo-Mandodari, who looks like the real one. Rama's father has a union with this pseudo-Mandodari, resulting in the birth of Sita, who is nominally Ravana's daughter.

আনন্দ রামায়ণ  - অনুসারে রাজা পদ্মাক্ষের পদ্মা নামে এক কন্যা ছিল। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীর অবতার। যখন পদ্মার বিবাহ স্থির হয়, তখন রাক্ষসরা রাজাকে হত্যা করে। শোকাহতা পদ্মা আগুনে ঝাঁপ দেন। রাবণ যখন পদ্মার দেহটি পান তখন তা পাঁচটি রত্নে পরিণত হয়েছিল। রাবণ একটি পেটিকায় ভরে সেটিকে লঙ্কায় নিয়ে আসেন। মন্দোদরী পেটিকা খুলে ভিতরে পদ্মাকে দেখতে পান। তিনি রাবণকে উপদেশ দেন পিতার মৃত্যুর কারণ দুর্ভাগিনী পদ্মা সহ পেটিকাটি জলে ভাসিয়ে দিতে। রাবণ যখন পেটিকার ঢাকনা বন্ধ করছিলেন, তখন পদ্মা রাবণকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, তিনি লঙ্কায় ফিরে আসবেন এবং রাবণের মৃত্যুর কারণ হবেন। রাবণ পেটিকাটি জনকের নগরীতে প্রোথিত করেন। জনক পদ্মাকে পেয়ে সীতারূপে পালন করেন।
According to the Ananda Ramayana, king Padmaksha had a daughter named Padma - an incarnate of the goddess Lakshmi. When her marriage is organized, Rakshasas (demons) kill the king. The grief-stricken Padma jumps into fire. Ravana discovers her body, which had turned into five jewels, in the fire and takes it to Lanka sealed in a box. Mandodari opens the box and finds Padma inside it. She advises Ravana to cast off the box containing the ill-fated Padma, who led to the doom of her father. When the lid of the box is closed, Padma curses Ravana that she will return to Lanka and cause his doom. Ravana buries the box in the city of Janaka, who discovers Padma and brings her up as Sita.

প্রমাণ স্বরূপ :-
সুবল চন্দ্র মিত্র প্রণীত সরল বাংলা অভিধান 

আমাদের Facebook Group :- https://www.facebook.com/groups/219761644798963/

Wednesday, September 19, 2012

গণেশ চতুর্থী


গণেশ চতুর্থী


ভাদ্র ও মাঘমাসের শুক্লাচতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। সনাতন ধর্মমতে  এই দিনটি ভগবান গণেশের জন্মদিন।একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী , এই দিনে শিব গণেশকে লুকিয়ে কার্তিকেয়কে একটি ফল দিয়েছিলেন। চন্দ্র তা দেখে হেসে ফেলেন বলে শিব চন্দ্রকে অভিশাপ দেন, যে চতুর্থীর দিন চাঁদ কেউ দেখবে না।

গণেশের ধ্যান :-
                         “খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।                  দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।” (গণেশধ্যানম্)      
অর্থাৎ, “যিনি খর্বাকৃতি, স্থূলশরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমরসমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাহার দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা ও কামদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।
গণেশের প্রণামমন্ত্র : –
                                                          একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।                                                           
                                                 বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।। (গণেশপ্রণামঃ)                                                 
অর্থাৎ, “যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।” 
গণেশের প্রার্থনা মন্ত্র :-
                                                              দেবেন্দ্রমৌলিমন্দারমকরন্দকণারুণাঃ।                                                         
                                                      বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ।। (গণেশপ্রার্থনা)                                       
অর্থাৎ, “দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ করুক।”
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে, তাঁর উদরে সমগ্র জগৎসংসারের অবস্থান বলেই তিনি লম্বোদর।

গণেশের বাহন মুষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর ধর্মের অবতার; মহাবল ও পূজাসিদ্ধির অনুকূল।মনে করা হয়, গণেশের পদতলে ইঁদুর, গণেশ কর্তৃক বিঘ্নবিজয়ের প্রতীক। বৃহদ্ধর্ম পুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে পৃথিবী গণেশকে মুষিক বাহন দিয়েছিলেন।

কৃষ্ণ প্রিয়া ভগবতী রাধারানী কৃত বিঘ্ননাশক গণেশ স্তোত্র 
------------------------------------------------------------ 
শ্রী রাধিকা উবাচ 
___________________

পরং ধাম পরং ব্রমহ পরেশং পরমীশ্বরম। 


বিঘ্ননিঘ্ন করং শান্তং পুষ্টং কান্তমনন্তরম।।


সুরাসুরেন্দ্রঐঃ সিদ্ধেন্দ্রঐঃ স্তুতং স্তউমি পরাতপরম। 


সুরপদ্মদিনেশং চ গণেশ মঙ্গলায়নম। 


এদং স্তোত্রং মহাপুন্যম বিঘ্ন শোক হরং পরম।


যঃ পঠেত প্রাতঃ উত্থায় সর্ব বিঘ্নাত প্রমুচ্যতে।। 


এই স্তোত্র মহাপুন্যদায়ী এবং বিঘ্ন ও শোক নাশক।

সকালে নিদ্রা ভঙ্গ করে এই স্তোত্র পাঠ করলে সকল বিঘ্ন হতে মুক্ত হওয়া যায়।

________________________________________________________________________
গাণপত্য সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থ তথা গণেশ বিষয়ক দুই উপপুরাণ গণেশ পুরাণ ও মুদ্গল পুরাণ-এ পৃথক পৃথকভাবে গণেশের যথাক্রমে চার ও আটটি অবতারের কথা বলা হয়েছে।
  • গণেশ পুরাণ – গণেশ পুরাণ-এ উল্লিখিত গণেশের চার অবতার সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে অবতীর্ণ হন। এঁরা হলেন –
    • মহোৎকট বিনায়ক – ইনি দশভূজ ও রক্তবর্ণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় এঁর বাহন হয় হাতি নয় সিংহ। ইনি সত্য যুগে কশ্যপ ও অদিতির সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেই কারণে কাশ্যপেয় নামে পরিচিত হন। এই অবতারে তিনি নরান্তক ও দেবান্তক নামে দুই অসুরভ্রাতা ও ধূম্রাক্ষ নামে এক দৈত্যকে বধ করেন।
    • ময়ূরেশ্বর – ইনি ষড়ভূজ ও শ্বেতবর্ণ। বাহন ময়ূর। ত্রেতা যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্ররূপে এঁর জন্ম। এই অবতারে তিনি সিন্ধু নামে এক দৈত্যকে বধ করেন। অবতারকাল সমাপ্ত হলে ময়ূরটি তিনি তাঁর ভ্রাতা কার্তিকেয়কে দান করেন।
    • গজানন – ইনি চতুর্ভুজ ও রক্তবর্ণ। বাহন ইঁদুর। ইনি দ্বাপর যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সিন্দুর নামে এক দৈত্যকে তিনি এই অবতারে বধ করেন। এই অবতারেই রাজা বরেণ্যর নিকট তিনি গণেশ গীতা প্রকাশ করেন।
    • ধূম্রকেতু – দ্বিভূজ অথবা চতুর্ভূজ ও ধূম্রবর্ণ। বাহন নীল ঘোড়া। ইনি কলি যুগের শেষে অবতীর্ণ হবেন ও অনেক দৈত্য বধ করবেন। এই অবতার বিষ্ণুর শেষ অবতার কল্কির অনুসরণে কল্পিত।
  • মুদ্গল পুরাণ – মুদ্গল পুরাণ-এ গণেশের আটজন অবতারের বর্ণনা পাওয়া যায়। এঁরা হলেন –
    • বক্রতুণ্ড – প্রথম অবতার। এঁকে ব্রহ্মের অংশ ও পরম বলে মনে করা হয়। ইনি সিংহবাহন। এই অবতারের উদ্দেশ্য মাৎসর্যাসুর (অর্থাৎ ঈর্ষা) বধ।
    • একদন্ত – ইনি প্রত্যেক ব্যক্তিগত আত্মা ও পরমব্রহ্মের প্রতীক। ইনি মুষিকবাহন। এই অবতারের উদ্দেশ্য মদাসুর (অর্থাৎ, অহং) বধ।
    • মহোদর – ইনি বক্রতুণ্ড ও একদন্তের সম্মিলিত রূপ। ব্রহ্মের প্রজ্ঞার প্রতীক। মোহাসুর (অর্থাৎ সংশয়) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য। ইনিও মুষিকবাহন।
    • গজবক্ত্র বা গজানন – মহোদরের অন্যরূপ। লোভাসুর (অর্থাৎ লোভ) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য।
    • লম্বোদর – ব্রহ্মের শক্তির প্রতীক। ইনি মুষিকবাহন। ক্রোধাসুর (অর্থাৎ রাগ) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য।
    • বিকট – সূর্যের প্রতীক। জ্যোতির্ময় ব্রহ্মের প্রকাশ। কামাসুর (অর্থাৎ কামনাবাসনা) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য। ইনি ময়ূরবাহন।
    • বিঘ্নরাজ – বিষ্ণুর প্রতীক। ব্রহ্মের অস্তিত্বের প্রকাশ। মমাসুর (অর্থাৎ অহংকার) বধের উদ্দেশ্যে এই অবতার।
    • ধূম্রবর্ণ – শিবের প্রতীক। ব্রহ্মের বিনাশ শক্তির প্রকাশ। ইনি অশ্ববাহন। অভিমানাসুর (অর্থাৎ গরিমা) বধের উদ্দেশ্যে এই অবতার

জন্মকথা

  • শিবপুরাণ – শিবপুরাণ-এ উল্লিখিত উপাখ্যান অনুসারে, পার্বতী একদিন নন্দীকে দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান। এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মান করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বসৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ তাঁকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুনর্জীবন দাবি করেন ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই পুত্র সকলের পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের মুণ্ডটি তখন আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্র রূপে স্বীকার করেন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যাত হন।
  • স্কন্দপুরাণ – স্কন্দপুরাণ-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান। নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে।
    স্কন্দপুরাণ-এর ব্রহ্মখণ্ডে আছে, পার্বতী নিজের গাত্রমল থেকে একটি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ পুতুল নির্মান করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পার্বতী তাঁকে নিজের স্নানাগারের দ্বাররক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। শিব স্নানাগারে প্রবেশ করতে গেলে বালক-কুমার তাঁকে বাধা দেন। শিবের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় ও শিব ত্রিশূলে তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন।এরপর গজাসুরকে সামনে পেয়ে শিব তার মস্তক ছিন্ন করেন তার মস্তক কুমারের স্কন্ধে যুক্ত করেন।
    স্কন্দপুরাণ-এর অর্বুদ খণ্ডে বলা হয়েছে, পার্বতী গাত্রমল দিয়ে একটি মুণ্ডহীন পুতুল তৈরি করেন। তারপর স্কন্দকে বলেন, পুতুলটির মাথা তৈরির জন্য একতাল কাদা আনতে; এই পুতুল হবে তাঁর ভাই। স্কন্দ কাদা না পেয়ে একটি হাতির মাথা কেটে আনেন। পার্বতী আপত্তি করলেও দৈবযোগে এই মুণ্ডটিই পুতুলের স্কন্ধে যুক্ত হয়। এরপর শক্তিরূপিনী পার্বতী পুতুলটির জীবনদান করেন। গজমুণ্ডযুক্ত পুতুলের দেহে এক বিশেষ নায়কের ভাব ফুটে ওঠে। এই কারণে শিবের বরে ইনি ‘মহাবিনায়ক’ নামে পরিচিত হন। শিব বলেন, এই কুমারগণাধিপতি হবে ও সকল কাজের আগে এঁর পূজা না করলে কার্যসিদ্ধি হবে না। স্কন্দ এঁকে অস্ত্র কুঠার দান করেন, পার্বতী দেন মোদকপূর্ণ সুগন্ধযুক্ত ভোজনপাত্র। মোদকের গন্ধে ইঁদুর এঁর বাহন হয়।
  • বৃহদ্ধর্মপুরাণ – বৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন। পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু। উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন। দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়।
  • ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ – ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী কৃষ্ণকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী অনুরূপ একটি পুত্রকামনা করেন। কৃষ্ণও তাঁকে ইচ্ছাপূরণের বর দেন। এরপর একদিন যখন শিব-পার্বতী স্বগৃহে ক্রীড়ারত ছিলেন, সেই সময় কৃষ্ণ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে ভিক্ষা চাইতে আসেন। পার্বতী তাঁকে ভিক্ষা দিতে গেলে শিবের বীর্য পতিত হয় ও কৃষ্ণ শিশুর বেশে পালঙ্কে আবির্ভূত হন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ অন্তর্হিত হন। পার্বতী তখন পালঙ্কে ‘শতচন্দ্রসমপ্রভম্’ এক শিশুকে শয্যায় দেখতে পেয়ে আনন্দিত হন। এরপর দেবতা ও ঋষিগণ কুমারকে দেখতে শিবের ভবনে আসেন। আসেন শনি দেবও। শনি নিজের কুদৃষ্টির কথা পার্বতীকে জানান। পার্বতী তবু তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি কুমারকে দেখতে সম্মত হন। কিন্তু শনি সভয়ে বাঁ-চোখের কোণ দিয়ে কুমারকে দেখামাত্র তার মস্তক ছিন্ন হয়ে বৈকুণ্ঠে কৃষ্ণের দেহে গিয়ে মেশে। পার্বতী শোকে মুর্ছিত হয়ে পড়েন। তখন বিষ্ণু গরুড়ে আরোহণ করে পুষ্পভদ্রা নদীর তীরে এসে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে থাকা এক হাতিকে দেখেন। তার মস্তক ছিন্ন করলে হস্তিনী ও তার শাবকেরা কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন। তখন বিষ্ণু ঐ মুণ্ডটি থেকে দুটি মুণ্ড তৈরি করে একটি হাতির স্কন্ধে ও অপরটি গণেশের স্কন্ধে স্থাপন করে উভয়কেই জীবিত করেন। শিবের অনুগ্রহে গণেশ সকল দেবতার অগ্রে পূজিত হবার অধিকার প্রাপ্ত হন। পার্বতী ও শিবের বরে গণেশ গণাধিপতি, বিঘ্নেশ্বর ও সর্বসিদ্ধিদাতা হন। এরপর কার্তিকেয়কে সেনাপতির পদে নিয়োগ করতে গিয়ে ইন্দ্রের হাত স্তম্ভিত হয়ে যায়। তিনি শিবকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণেশকে আগে পূজা না করার জন্যই এমন হয়েছে।
    ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লিখিত আরেকটি মতে, মালী ও সুমালী নামে দুই শিবভক্ত সূর্যকে ত্রিশূল দ্বারা আঘাত করেন। এতে সূর্যঅচৈতন্য হয়ে পড়লে বিশ্ব অন্ধকার হয়ে যায়। সূর্যের পিতা কশ্যপ শিবকে অভিশাপ দেন যে শিবের পুত্রে মাথাও খসে যাবে। এই জন্য গণেশ মুণ্ডহীন হন ও ইন্দ্রে ঐরাবতের মাথা এনে তাঁর মস্তকে জুড়ে দেওয়া হয়।
  • পদ্মপুরাণ – পদ্মপুরাণ মতে, হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন, তাঁদের সেই মিলনের ফলে গজমুণ্ড গণেশের জন্ম হয়।
  • লিঙ্গপুরাণ – লিঙ্গপুরাণ মতে, দেবগণ শিবের নিকট উপস্থিত হন ও ব্রহ্মা অসুরদের হাত থেকে নিরাপত্তা চান। শিব তখন নিজ দেহ থেকে গণেশের জন্ম দেন।
  • বরাহপুরাণ – বরাহপুরাণ মতে, দেব ও ঋষিগণ রুদ্রের নিকটে বিঘ্নোপসারণকারী এক নতুন দেবতা চাইলে হাস্যময় শিবের সম্মুখস্থ আকাশে শিবের গণ-যুক্ত একটি কুমারের জন্ম হল। এই শিশুর রূপে দেবগণ, এমনকি স্বয়ং পার্বতী মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু শিব ক্রুদ্ধ হলেন ও অভিশাপ দিলেন যে এই কুমারের গজমুখ, লম্বোদর ও নাগ উপবীত হবে। এই ক্রুদ্ধ হবার সময় শিবের পদনিঃসৃত ঘাম থেকে অসংখ্য গজমুখ বিনায়ক গণ জন্ম নিলেন। কুমার গণেশ হলেন এঁদের অধিপতি। এখানে কুমার গণেশ ও গণেরা বিঘ্নকর ও গজাস্য বলে উল্লিখিত।
  • দেবীপুরাণ – দেবীপুরাণ মতে, শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত ঘামতে থাকে এবং সেই ঘাম থেকে গজাননের জন্ম হয়।
  • মৎসপুরাণ – মৎস্যপুরাণ মতে, পার্বতী চূর্ণক বা বেসম দিয়ে নিজের গাত্রমার্জনা করছিলেন। সেই সময় এই চূর্ণক দিয়ে একটি গজানন মূর্তি নির্মান করে তা গঙ্গাজলে ফেলে দেন। পুতুলটি বিরাট হয়ে পৃথিবী পূর্ণ করতে উদ্যত হলে পার্বতী ও গঙ্গা একে পুত্র সম্বোধন করেন ও ব্রহ্মা একে গণাধিপতি করে দেন।
  • বামনপুরাণ – বামনপুরাণ মতে, পার্বতী স্নানের সময় নিজের গাত্রমল দিয়ে চতুর্ভূজ গজানন মূর্তি নির্মান করলে মহাদেব তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। বলেন, যেহেতু “ময়া নায়কেন বিনা জাতঃ পুত্রকঃ” (আমাকে ছাড়াই পুত্রের জন্ম হয়েছে) সেহেতু এ বিনায়ক নামে প্রসিদ্ধ হবে এবং বিঘ্ননাশকারী হবে।

অন্যান্য উপাখ্যান

  • ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ – ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, পরশুরাম একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করে কৈলাসে শিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে, দ্বাররক্ষক গণেশ তাঁকে বাধা দেন। ফলে উভয়ের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়। পরশুরাম কুঠারের আঘাতে গণেশের একটি দাঁত সমূলে উৎপাটিত করেন।
  • শিবপুরাণ – শিবপুরাণ অনুসারে, গণেশ ও কার্তিকেয় বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। তখন স্থির হয়, উভয়ের মধ্যে যে আগে বিশ্বপরিক্রমা করে আসতে পারবে তার বিবাহ আগে হবে। কার্তিকেয় ময়ূরে আরোহণ করে বিশ্বপরিক্রমায় বের হন; কিন্তু গণেশ শিব ও পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বলেন, শাস্ত্রমতে তিনি শতবার বিশ্বপরিক্রমা করলেন। এরপর বিশ্বরূপের দুই কন্যা সিদ্ধি ও বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিবাহ হয়। সিদ্ধির পুত্র হয় লক্ষ্য ও বুদ্ধির পুত্র লাভ। কার্তিক নারদের কাছ থেকে বিবাহের সংবাদ পেয়ে ফিরে আসেন ও মনের দুঃখে ক্রৌঞ্চ পর্বতে গিয়ে বাস করতে থাকেন। অন্য একটি মতে, তুলসী নামে এক নারী গণেশকে বিবাহ করতে চাইলে ব্রহ্মচর্যব্রতী গণেশ অসম্মত হন। তিনি তুলসীর চিত্ত বৈকল্যের জন্য তাকে শাপ দেন দানবপত্নী হওয়ার। তুলসীও তাকে শাপ দেন। ফলে পুষ্টি নামে এক নারীকে গণেশ বিবাহ করতে বাধ্য হন।
  • তন্ত্র – তন্ত্রমতে লক্ষ্মী ও সরস্বতী গণেশের স্ত্রী। এছাড়াও তীব্রা, জ্বালিনী, নন্দা, সুভোগদা, কামরূপিনী, উগ্রা, তেজোবতী, সত্যা ও বিঘ্ননাশিনী নামে তাঁর নয়জন শক্তির কথাও জানা যায়।
মহাভারত – মহাভারত মতে, কৌরব ও পাণ্ডবদের মৃত্যু হলে ব্যাস ধ্যানে বসেন। মহাভারতের সমস্ত ঘটনা তাঁর মনের মধ্যে ফুটে ওঠে। তখন এই সুবিশাল গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করার জন্য উপযুক্ত লিপিকারের খোঁজে তিনি ব্রহ্মার নিকট যান। ব্রহ্মা তাঁকে গণেশের কাছে যেতে বলেন। গণেশ মহাভারত লিখতে সম্মত হন বটে, কিন্তু শর্তারোপ করেন, লিখতে লিখতে তাঁর কলম থামতে দেওয়া চলবে না। ব্যাসও পাল্টা শর্তারোপ করেন, কোনও শ্লোকের অর্থ না বুঝে তিনি লিখতে পারবেন না।এইজন্য ব্যাস মহাভারতে ৮৮০০ কূটশ্লোক অন্তর্ভূক্ত করেন, যেন এই শ্লোকগুলির অর্থ অনুধাবন করতে গণেশের বেশকিছুটা সময় লাগে ও সেই অবসরে তিনি আরও কতকগুলি শ্লোক রচনা করে ফেলেন।

হিন্দুদের সমস্ত ধর্মীয় ও বিভিন্ন সারস্বত অনুষ্ঠানে গণেশ পূজিত হন। এছাড়াও ব্যবসারম্ভের সময় গণেশপূজা অবশ্যকর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, সকল কার্যের পূর্বে গণেশ স্মরণ বা পূজন শুভকর ও মঙ্গলজনক এবং তা করলে কার্যে সিদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।

মার্গসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় নৃত্য বিশেষত ভরতনাট্যমের সূচনায় গণেশ বন্দনার প্রথা প্রচলিত আছে। ‘ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গনেশায় নমঃ’ গণেশের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ দুটি মন্ত্র।

মহারাষ্ট্রে গণেশ মহোৎসব

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অনুষ্ঠিত গণেশ চতুর্থী গণেশের নামে উৎসর্গিত বৃহত্তম উৎসব। প্রতিবছর অগস্ট মাসের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ভাদ্রমাসের শুক্লাচতুর্থী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দশদিন ধরে মহারাষ্ট্রে এই উৎসব চলে। অতঃপর অনন্ত চতুর্দশীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। মহারাষ্ট্রে এই উৎসব পূর্বে ছিল পারিবারিক গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ এক ক্ষুদ্র পর্বমাত্র। ১৮৯৩ সালে লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক এই উৎসবকে মহারাষ্ট্রের এক জাতীয় উৎসবে পরিণত করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুধর্মের জাতিভেদের সংকীর্ণতা দূর করে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলনকে সুসংবদ্ধ ও সংগঠিত করা। তিলকই প্রথম বারোয়ারি মণ্ডপে গণেশ প্রতিমা স্থাপন করেন ও দশদিন বাদে গণেশ বিসর্জনের প্রথার সূচনা করেন। আজও মহারাষ্ট্র ও সন্নিহিত অঞ্চলের লোকজন পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে এই উৎসব পালন করে থাকেন। মুম্বাই মহানগরীতে এই উৎসব সর্বাধিক জাঁকজমকের সহিত পালিত হয়।
http://bn.wikipedia.org/wiki/গণেশ  থেকে সংগৃহিত 
আমাদের Facebook Group :- https://www.facebook.com/groups/219761644798963/


Tuesday, September 18, 2012

রাম সেতু (Ram Setu)

পৃথিবীর প্রাচীনতম মানব নির্মীত সেতু

  রাম সেতু (Ram Setu)   



এই বিশাল সেতুটি রামভক্ত নলের সুতত্ত্বাবধানে মাত্র ৫ দিনেই নির্মিত হয়েছিল, আজ থেকে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার বছর পূর্বে, ত্রেতা যুগে ! বানরসেনারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীরামের পবিত্র নাম পাথরে লিখে সমুদ্রপথে একটি পাথরের সেতু তৈরি করেছিলেন । শ্রী রাম নাম খচিত সেই পাথরগুলো অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে জলে নিক্ষেপের পর নিমজ্জিত না হয়ে ভেসে উঠেছিল । ভগবানের দিব্যনাম যে কত মহিমাপূর্ণ তারই দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এ লীলার অবতারনা করেছিলেন ।
সেতুটি ভারতের দক্ষিন উপকূলকে লঙ্কার সাথে যুক্ত করল । এই সেতু দিয়ে রাম তার হনুমান বাহিনী নিয়ে লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধার করলেন। সেই থেকে এই সেতুর নাম রাম সেতু । এই ঘটনাটির উল্লেখ রয়েছে সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র ‘রামায়ণে’ ।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে,  আধুনিক মানুষের উদ্ভব মাত্র দেড়-দু লক্ষ বছর আগে , তবে রামসেতু  আজ থেকে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে তৈরী হলো কি ভাবে তাও মানব নির্মীত ???

সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা(NASA) তাদের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের (স্যাটেলাইট) সাহায্যে রামায়ণে উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট সেই স্থানেই রাম সেতু চিহ্নিত  করেছে, নাসা আরও জানিয়েছে, সেতুটি ৩০ কি.মি. দীর্ঘ যা বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের  রামেশ্বরমের ধনুষ্কোডি  দ্বীপ ( দ্বীপটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পাম্বান সেতু দ্বারা যুক্ত ) থেকে শ্রীলঙ্কার   মান্নারের তালাইমান্নারের পর্যন্ত বিস্তৃত ।যা  আজ থেকে প্রায়  ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্ট এবং মানব নির্মীত 

এক্ষেত্রে   একটা প্রশ্ন চলে আসে বিজ্ঞান এর কাজ কি সব শেষ হয়ে গেছে ??? বিজ্ঞান কী আর কিছুই আবিষ্কার করবে না ???
না তা হয় না , বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে এবং তা  তার আগের যুক্তি কে কখনো সামনে রেখে বা কখনো নিজেয়  তার পূর্বের সিদ্ধা ন্ত কে ভূল প্রমাণিত করে 
। প্রত্যহ নিত্য নতুন ঐতিহাসিক সামগ্রী আবিষ্কার বিজ্ঞান কে নতুন করে মানব সভ্যতার ইতিহাস লিখতে যেমন ভাবাচ্ছে , আর  ঠিক তেমন ভাবেয় সনাতন ধর্মগ্রন্থ, বিজ্ঞানকে সঠিক পথ নির্দেশের মাধ্যমে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড তথা  মানব  মানব সভ্যতার ইতিহাস লিখতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করছে । শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে আজ যা আবিষ্কার হয় বহু পূর্বেই তা ভারত বর্ষে আবিষ্কৃত হয়েছে বা পরিকল্পনা পরিকল্পিত হয়েছিল,  কিন্তু কিছু মতবাদের গোড়ামির বশে সেই যৌক্তিকতাকে  উপেক্ষা করে বৃথা কালব্যায় করে বিজ্ঞান । " যা  নেয় ভারতে তা নেয় ভারতে "

মনে রাখতে হবে এই সেতু (পক প্রণালী) যাকে আমেরিকা বা পশ্চিমের দেশগুলো মনে করে আদম এর সেতু।
এটি এমন একটি উপকথা থেকে উৎসারিত হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ ভারত বা শ্রীলঙ্কা বর্ণিত হয়েছে বাইবেলকথিত পার্থিব প্যারাডাইস বা স্বর্গোদ্যান বলে। এই উপকথা অনুসারে অ্যাডাম যখন স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন, তখন অ্যাডামস ব্রিজ নির্মিত হয়। কথা হল তাহলে কেন অন্য কোন সাগর মহাসাগরে এরকম কোন সেতু নাই। এর উত্তর কারো কাছেই নাই। এর সহজ উত্তর হল আদমের সেতু নামে যে সেতু এখানে আছে এই সেতু শ্রী শ্রী রাম চন্দ্রের বানানো সেই সেতু । অ্যাডামস ব্রিজ বা অ্যাডামের সেতু কথাটি রামসেতুর অনেক পরে চালু হয়।যায় হোক  আমেরিকা বা পশ্চিমের দেশগুলোর উক্ত ধারণা থেকেও একথা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে এই ভারতবর্ষ সারা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্গ নামেই অভিহিত হত  

লেখকঃ  Bhabesh Chandra Ghosh

আমাদের Facebook Group :- http://www.facebook.com/groups/OmSabha

Sunday, September 16, 2012

দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মা

দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মা

যিনি বিশ্বকর্মা, তাঁহার মন বৃহৎ, তিনি নিজে বৃহৎ, তিনি নির্মাণ করেন, ধারন করেন, তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ, এবং সকল অবলোকন করেন  I                                                                                                             --- ঋগ্বেদ



হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে- ইনি ছিলেন দেবশিল্পী। বিষ্ণুপুরাণের মতে প্রভাসের ঔরসে বৃহস্পতির ভগিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম হয়। বেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা হয়েছে। বিশ্বকর্মা মূলত সৃষ্টিশক্তির রূপক নাম। সেই অর্থে ইনি পিতাসর্বজ্ঞ দেবতাদের নামদাতা। ইনি সর্বমেধ-যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে বলি দেন। ইনি বাচস্পতিমনোজববদান্যকল্যাণকর্মাবিধাতাঋগবেদের মতে ইনি সর্বদর্শী ভগবান। এঁর চক্ষুমুখমণ্ডলবাহু  ও পা সর্বদিক বিদ্যমান। বাহু ও পায়ের সাহায্যে ইনি স্বর্গ ও মর্ত্য নির্মাণ করেন। ইনি শিল্পসমূহের প্রকাশক ও অলঙ্কারের স্রষ্টা,দেবতাদের বিমান-নির্মাতা। এঁর কৃপায় মানুষ শিল্পপকলায় পারদর্শিতা লাভ করে। ইনি উপবেদস্থাপত্য-বেদের প্রকাশক এবং চতুঃষষ্টি কলার অধিষ্ঠাতা। ইনি প্রাসাদভবন ইত্যাদির শিল্পী। ইনি দেবতাদের জন্য অস্ত্র তৈরি করেন। মহাভারতের মতে ইনি শিল্পের শ্রেষ্ঠ কর্তাসহস্র শিল্পের আবিস্কারকসর্বপ্রকার কারুকার্য-নির্মাতা। স্বর্গ ও লঙ্কাপুরী ইনিই নির্মাণ করেছিলেন। রামের জন্য সেতুবন্ধ নির্মাণকালে ইনি নলবানরকে সৃষ্টি করেন। কোনো কোনো পুরাণ মতেবিশ্বকর্মা বৈদিক ত্বষ্টা দেবতার কর্মশক্তিও আত্মসাৎ করেছিলেন। এই জন্য তিনি ত্বষ্টা নামেও অভিহিত হন 


বিশ্বকর্মার কন্যার নাম ছিল সংজ্ঞা। ইনি এঁর সাথে সুর্যের বিবাহ দেন। সংজ্ঞা সুর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পারায়ইনি সুর্যকে শানচক্রে স্থাপন করে তাঁর উজ্জলতার অষ্টমাংশ কেটে ফেলেন। এই কর্তিত অংশ পৃথিবীর উপর পতিত হলেউক্ত অংশের দ্বারা বিশ্বকর্মা বিষ্ণুর সুদর্শনচক্রশিবের ত্রিশূলকুবেরের অস্ত্রকার্তিকেয়ের শক্তি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্রশস্ত্রাদি নির্মাণ করেন। বলা হয়ে থাকেশ্রীক্ষেত্রের প্রসিদ্ধ জগন্নাথমূর্তি বিশ্বকর্মা প্রস্তুত করেন


শ্রী গনেশ মন্ত্র ও স্তুতি

শ্রী গনেশ মন্ত্র  ও স্তুতি 


 वक्रतुंड महाकाय सूर्यकोटिसमप्रभ ।


 निर्विघ्नं कुरु मे देव सर्वकार्येषु सर्वदा ॥ 

"oh!  (Ganesh) of huge body and curved elephant trunk, whose brilliance is equal to billions of suns, always remove all obstacles from my endeavors."


गजाननं भूतगणादिसेवितं कपित्थजंबूफलचारुभक्षणम्‌ ।
उमासुतं शोकविनाशकारकं नमामि विघ्नेश्वरपादपङ्कजम्‌ ॥
"Salutations to Lord Ganesha who has an elephant head, who is attended by the band of his followers, who eats his favorite wood-apple and rose-apple fruits, who is the son of Goddess Uma, who is the cause of destruction of all sorrow. And I salute to his feet which are like lotus."
सुमुखश्चैकदंतश्च कपिलो गजकर्णकः ।
लम्बोदरश्च विकटो विघ्ननाशो गणाधिपः ।
धूम्रकेतुर्गणाध्यक्षो भालचन्द्रो गजाननः ।
द्वादशैतानि नामानि यः पठेच्छृणुयादपि ।
विद्यारंभे विवाहे च प्रवेशे निर्गमे तथा ।
संग्रामे संकटे चैव विघ्नस्तस्य न जायते





Facebook Comment

আজকের তারিখ