ॐ सभा-য় আপনাদের জানাই স্বাগতম <> Facebook Page www.facebook.com/omsabha <> Facebook Group www.facebook.com/groups/OmSabha <> Blog,Page,Group থেকে বিনা অনুমতিতে লেখা নিলে আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। <> সকল স্বত্ব ॐ सभा -র দ্বারা সংরক্ষিত ।

Monday, October 15, 2012

গদ্যে শ্রী শ্রী চন্ডী


( দেবীর আবির্ভাব )


বহু আগে যখন দ্বিতীয় মনু ছিলেন তখন চৈত্রের বংশ জাত রাজা সুরথ পৃথিবীর এক মাত্র অধীশ্বর ছিলেন । তিনি তার প্রজাদের পুত্রসম স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে রাজ্য শাসন করতেন । একদা যবন রাজারা তার রাজ্য আক্রমণ করেন । যুদ্ধে রাজা সুরথ এর পরাজয় হয় । তার রাজ্য , সিংহাসন , ধন, সম্পদ সব শত্রুর হাতে চলে যায় । তিনি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন । মনের দুঃখে তিনি বনে চলে যান । সেখানে তিনি বিষন্ন মনে ঘুরতে থাকেন । 

বনে গিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে রাজা খানিকটা এগিয়ে গেলেন । সেখানে তিনি এক মুনির আশ্রম দেখতে পেলেন । আশ্রমে ঢুকে জানতে পারলেন এটি মেধস্ মুনির আশ্রম । রাজা সেখানে চিন্তা করতে লাগলেন “ অতীতে আমার পূর্বপুরুষ গন যে রাজ্যকে সুন্দর ভাবে পালন করিয়াছেন , তাহা এখন দুষ্ট অমাত্য দের দখলে । তারা এখন সকল প্রজাদের রক্ষা করিতেছেন কিনা ? জানি না সেই মহাবলবান মদস্রাবী প্রধান হাতিটি শত্রুদের অধিকৃত হয়ে ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছে কিনা ? যে সকল রাজ কর্মচারী আগে পারিতোষিক , বেতন , খাদ্যদ্রব্য পেয়ে আমার অনুগত থাকত , আজ তারা অন্যের দাসত্ব করছে । আমি এত কষ্ট করে , দুঃখ করে যে বিশাল ধনরাশি জমা করেছিলাম তা ঐ অমিতব্যয়ী গন অপচয় করে শেষ করবে” । 

অপর দিকে সমাধি নামক এক বৈশ্য সেই বনে বিষন্ন মনে চলে আসেন । সমাধি বৈশ্য এক বিত্তশালী ঘরের ছিলেন । তিনি ছিলেন ধনী । কিন্তু তার স্ত্রী ও পুত্রেরা সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে তাকে পরিত্যাগ করেন । ঘটনাচক্রে সমাধি বৈশ্য বনে ভ্রমণ করতে করতে মেধস মুনির আশ্রমে পৌছালেন ।

সমাধি বৈশ্য কে সেখানে দেখে রাজা সুরথ তার পরিচয় জানতে চাইলে সমাধি বৈশ্য তার পরিচয় ও দুঃখের কারণ জানালেন । সমাধি বৈশ্য জানালেন “ আমার অসাধু স্ত্রী ও পুত্রেরা ধনের লোভে আমাকে পরিত্যাগ করেছে । আমি এখন ধনহীন দরিদ্র । আমার আত্মীয় কুটুম্ব , বন্ধু বান্ধব রা আমাকে পরিত্যাগ করায় আমি মনে অনেক দুঃখ নিয়ে বনে চলে এসেছি । কিন্তু এখানে এসেও আমি আমার স্ত্রী , পুত্র ও বন্ধু দের ভুলতে পারছি না । তারা কেমন আছে , তারা ভালো না খারাপ পথে চলছে তাও আমি জানি না।”

রাজা সুরথ বললেন “ যে আত্মীয় ও স্ত্রী পুত্রেরা ধন লোভে আপনাকে পরিত্যাগ করল তাদের জন্য আপনার মন এত স্নেহাসক্ত হচ্ছে কেন ?”
সমাধি বৈশ্য বললেন “ আপনি আমার সম্পর্কে ঠিক বলেছেন । কিন্তু আমি আমার মনকে নিষ্ঠুর করতে পারছি না । বরং তাদের প্রতি আমার মন আরো আসক্ত হচ্ছে । তাদের জন্য আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে । আমি আমার মনকে নিষ্ঠুর করতে পারছি না ।”

রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য এরপর মেধস্ মুনিকে প্রনাম জানিয়ে বললেন – “ হে ভগবন , আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করি । আপনি কৃপা করে তার উত্তর দিন । আমার মন আমার নিজের বশীভূত নয় । সেজন্য আমার হারানো রাজ্যাদিতে এখনও আমার মমতা আছে । আমি এও জানি যে এই হারানো মমতা দুঃখের কারন । কিন্তু এমন জানা সত্ত্বেও আমার হারানো রাজ্য ও রাজ্যের অঙ্গ গুলির জন্য আমার যে আসক্তি বা মমতা থেকে গেছে এর কারণ কি ? এই সমাধি বৈশ্য কেও তার স্ত্রী ও পুত্রেরা তাঁর ধন থেকে বঞ্চিত করেছে । তাঁর অমাত্য কর্মচারীরা তাকে বর্জন করেছে , আত্মীয় স্বজন রাও তাকে ছেড়ে চলে গেছে । কিন্তু তবুও ইনি সেই তাদের প্রতি একান্তভাবেই আসক্ত । এই ভাবেই ইনি ও আমি উভয়েই খুব দুঃখিত হয়েছি । কারণ স্ত্রী- পুত্র – রাজ্যাদি বিষয়ে দোষ দেখেও তাদের প্রতি আমাদের মন মমতায় আকৃষ্ট হয়ে আছে । হে মহামতি , আমারও এরকম জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই মোহ কি জন্য ? এইরকম মূঢ়তা বিবেকহীন লোকেদেরই হয়ে থাকে ।”

মেধস্ ঋষি বললেন – “ হে মহাভাগ , সকল প্রাণীরই রূপ , রস , প্রভৃতি সম্পর্কিত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বিষয়ে জ্ঞান আছে এবং সে সব বিষয় সমূহ কিভাবে তাদের জ্ঞান গোচর হয় তা আপনাদের বলছই

পেঁচা বা তার মত প্রানী দিনের বেলায় দেখতে পায় না । তারা অন্ধ হয়ে থাকে । আবার কাক বা তার মতো প্রানী রাতের বেলায় দেখতে পায় না । আবার অনেক প্রানী দিন রাত সর্বদা অন্ধ থাকে । আর বিড়ালের মতো প্রানী দিন রাত সব সময় দেখতে পায় । একথা সত্য যে মানুষের বিষয় জ্ঞান আছে । কিন্তু তাদেরই শুধু বিষয় জ্ঞান আছে – একথা ঠিক না । কারণ পশু পাখী হরিণ , মাছ সকল প্রাণীরই বিষয় জ্ঞান আছে , মানুষেরও তেমনি বিষয় জ্ঞান আছে । আবার মানুষের যে রকম বিষয়ে জ্ঞান আছে পশু পাখীদেরও সেরকমই আছে । আহার , নিদ্রা প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞান পশু- পাখী এবং মানুষ উভয়েই সমান ।

দেখুন  পাখীরা যে খাবার সংগ্রহ করে তাই তাদের শাবকের মুখে তুলে দেয় । এর ফলে তারা খেলেও তাদের ক্ষুধার নিবৃত্তি হয় না । একথা আমরা যেমন জানি বুঝি তেমনি পাখীরাও বুঝে । অথচ সব জেনে বুঝেও তারা শস্যকণা তাদের শাবক দের মুখে তুলে দিতে কত আগ্রহ । হে নরশ্রেষ্ঠ , এই মানুষ দের ক্ষেত্রে আবার দেখছেন না , তারা ভাবে তাদের সন্তান ভবিষ্যতে তাদের প্রত্যুপকার করবে ; সেই লোভে তারা তাদের সন্তান দের প্রতি কতই না অনুরক্ত হয় ? তবুও সংসারের স্থিতি কারিনী মহামায়ার প্রভাবে জীব গণ মোহ রুপ গর্তে এবং মমতা রুপ আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে । এই মহামায়াই জগতের অধিপতি বিষ্ণুর যোগনিদ্রা স্বরুপিনী । তার দ্বারাই এই সারা জগত মোহিত হয়ে আছে । সুতরাং এ বিষয়ে আশ্চর্য হওয়া উচিত নয় । এমনকি সেই দেবী ভগবতী মহামায়ার প্রবল প্রতাপ থেকে জ্ঞানবান বা বিবেক সম্পন্ন মানুষেরও রেহাই নেই । সেই মহামায়া তাদের চিত্তকে জোর করে আকর্ষণ করে মোহের দ্বারা আবৃত করে রাখেন । অতএব যারা সাধারন মানুষ তারা যে তার মোহপাশে আবদ্ধ থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কি ?

সেই মহামায়া এই সমস্ত চরাচর জগত কে সৃষ্টি করেছেন । তিনি প্রসন্না হলে তাঁরই কৃপায় মানুষ মুক্তিলাভ করে থাকে । সেই মহামায়াই সংসার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় । তিনিই পরমা ব্রহ্মবিদ্যারূপিণী ও সনাতনী । তিনি সংসার বন্ধনের কারন স্বরুপিনী অবিদ্যা এবং তিনি ব্রহ্মা , বিষ্ণু প্রভৃতি সকল ঈশ্বরের ঈশ্বরী ,অধিশ্বরী । ”

এই কথা শুনে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য জিজ্ঞেস করলেন – “ হে ভগবন , আপনি যাঁকে মহামায়া বলছেন – সেই দেবী কে? তিনি কি রুপে উৎপন্না হন ? 
সেই মহামায়ার স্বভাব কি রকম ? তাঁর স্বরূপ কি রকম ? এবং যে জন্য তেনার আবির্ভাব হয় তা আমি আপনার থেকে শুনতে ইচ্ছা করি ।”

মুনি বলিলেন – “ সেই মহামায়া নিত্যা । এর অর্থ তার জন্ম নেই । মৃত্যু নেই । আবার এই জগত প্রপঞ্চ তাঁরই বিরাট মূর্তি । তিনি সর্বত্রই বিরাজমানা । তিনি নিত্যা । তাও তাকে বহুবার আবির্ভূত হতে হয়েছে ও হতে হয় । আমি আপনাদের কাছে সেই কথা বলছি । আপনারা তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন ।”

( মধু কৈটভ বধ )

পূর্বে প্রলয়কালীন সাগর জলে অখিল বিশ্ব পরিব্যাপ্ত এবং ত্রিভুবন বিলীন হলে যখন ভগবান বিষ্ণু অনন্ত নাগ শয্যায় শয়ন করছিলেন তখন তাঁর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামক দুই অসুর প্রকট হলেন । তারা জলে খেলা করে বেশ কিছুদিন কাটালো । একদা তাদের মনে প্রশ্ন জাগল যে, এই জলরাশি কোন বস্তুর ওপর অবস্থান করছে ? কে এর সৃষ্টি কর্তা ? কি ভাবে এটি সৃষ্টি হয়েছে ? আমাদের বাবা মা কে?
অসুর দ্বয় এই প্রশ্নের কথা ভাবতে লাগলো । এমন সময় কৈটভ বলল – “ ভাই আমার মনে হয় , আমাদের যে এই জলের মধ্যে থাকা অচলা শক্তি আছে , তাই সব কিছুর কারন হবে । এই জলরাশি সেই শক্তিতে পরিব্যাপ্ত হয়ে তাতেই অবস্থিত আছে । সেই পরমা দেবী আমাদের কারণ হবেন । ”

চিন্তায় ব্যাকুল তারা দুইজন তখন আকাশে একটি বাগবীজ শুনতে পেলো । তারা সেই বীজ উচ্চারন করতে থাকল । এভাবে তারা শুদ্ধচিত্তে হাজার বছর তপস্যা করল ।

একদা তারা নারী কণ্ঠ শুনতে পেলো । দেবী বলছেন “ হে দানব দ্বয় । আমি তোমাদের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়েছি । তোমরা বর প্রার্থনা কর । ”

দুই দানব ইচ্ছামৃত্যুর বর চাইলো । দেবী তাদের তাই বর দিলেন । তখন দুই দানব জলে খেলা করে বেড়াতে লাগলো । হটাত তারা একদিন ভগবান শ্রী হরির নাভি পদ্মে ধ্যানমগ্ন ব্রহ্মা কে দেখতে পেলেন । তারা তখন ব্রহ্মা কে আক্রমণ করলেন । ব্রহ্মা তখন আত্মরক্ষার জন্য ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন । তিনি ভগবান বিষ্ণুর স্তব করতে লাগলেন । কিন্তু ভগবান যোগ নিদ্রায় মগ্ন । তিনি জাগলেন না । ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন ভগবান বিষ্ণু যোগমায়ার প্রভাবে যোপ নিদ্রায় আছন্ন । তাই যোগমায়া ভগবান বিষ্ণু কে প্রভাব মুক্ত না করলে তিনি জাগবেন না । তাই ব্রহ্মা সেই আদ্যাশক্তির স্তব করতে লাগলেন ।

ব্রহ্মার স্তব

“ হে নিত্যে , হে অক্ষরে , তুমি দেবতাদের উদ্দ্যেশে হবিঃ দানের ‘স্বাহা’ মন্ত্র । তুমি পিতৃলোকের উদ্দ্যেশে দ্রব্যদানের ‘ স্বধা ’ মন্ত্ররূপা । তুমি দেবতাদের আহ্বানের বষট্ মন্ত্র স্বরুপিনী । তুমিই অমৃত রূপা এবং তুমি অ-উ-ম এই মাত্রা রুপে অবস্থিতা প্রনব রুপা । যা বিশেষ রুপে উচ্চারনের যোগ্য নয় , সেই নির্গুণা বা তুরীয়া – তাও তুমি । হে দেবী তুমিই গায়ত্রী মন্ত্র স্বরুপিনী । তুমিই পরমা জননী । হে দেবী তুমিই এই সমগ্র জগত কে ধরে রেখেছো , এই জগত তোমারই দ্বারা সৃষ্ট ও প্রতিপালিত হয় এবং সব সময় প্রলয় কালে তুমি একে গ্রাস করে থাকো বা সংহার করে থাকো । হে জগতস্বরূপা , তুমিই এই জগতের সৃষ্টির সময় সৃষ্টিরূপা , পালন কালে তুমিই স্থিতি রুপা , এবং সবসময় প্রলয়কালে তুমি সংহার রুপা । হে দেবী তুমিই তত্ত্বমসি ইত্যাদি মহাবাক্য লক্ষণা ব্রহ্মবিদ্যা ও মহামায়া । তুমিই মহতী মেধা বা ধারনা । তুমিই মহতী স্মৃতি ও মহামোহরুপিনী । তুমিই সর্ব রপিনী । তুমি দেবশক্তি আবার তুমিই অসুর শক্তি । তুমি সর্বভূতের মূল কারণ রুপা প্রকৃতি এবং গুনত্রয়ের প্রসবকারিনী । তুমিই কালরাত্রি অর্থাৎ যাতে ব্রহ্মার লয় হয় ও মহারাত্রি যাতে জগতের লয় হয় এবং ভীষন মোহরাত্রিস্বরূপা । তুমি শ্রী অর্থাৎ লক্ষ্মী । তুমি ঈশ্বরী শক্তি । তুমিই হ্রী । তুমিই নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি । তুমিই লজ্জা । তুমিই পুষ্টি এবং তুমিই শান্তি ও ক্ষমারূপিণী । তুমিই খড়্গ ধারিনী । তুমিই ত্রিশূলধারিণী , তুমিই ভয়ঙ্করী , গদাধারিনী , চক্রধারিনী , শঙ্খধারিনী এবং ধনুর্ধারীনি । তুমিই বাণ , ভূশন্ডী ও পরিঘ নামে অস্ত্রধারিনী । তুমিই দেবতা গনের প্রতি প্রশান্তা বা সৌম্যা । তুমিই দৈত্য গনের প্রতি অসৌম্যতরা অর্থাৎ ততোধিক রুদ্রা। তুমিই সকল সুন্দর বস্তুসমূহ থেকেও সুন্দরী । তুমিই ব্রহ্মা প্রভৃতি দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । তুমিই সর্ব প্রধানা দেবী ও তুমিই পরমেশ্বরী । হে সর্বস্ব রুপে যে কোন জায়গায় বা স্থানে যে কোন চেতনা বা জড় বস্তু অতীতে ছিল , বর্তমানে আছে , এবং ভব্যিষতে হবে সেই সকল যেই শক্তি তাও তুমি । অতএব কিভাবে তোমাকে স্তব করব? যিনি ব্রহ্মা রুপে জগতের সৃষ্টি করেন । বিষ্ণু রুপে জগতকে পালন করেন এবং শিব রুপে জগতকে ধ্বংস করেন , সেই পরমেশ্বরকেই তুমি নিদ্রায় অভিভূত করেছ । সুতরাং এই জগত সংসারে তোমার স্তব করার সাধ্য কার আছে ? তুমি আমাকে , বিষ্ণুকে এবং শিবকেও শরীর গ্রহণ করিয়েছ । সুতরাং কে তোমার স্তব করতে পারে ? হে দেবী , তুমিই এক রকম ভাবে নিজ অলৌকিক মহিমায় সংস্তুতা হয়ে মধু ও কৈটভ নামক এই দুর্জয় দুই অসুরকে মোহিত কর । হে দেবী তুমিই জগত স্বামী বিষ্ণুকে শীঘ্র যোগনিদ্রা থেকে জাগিয়ে এই দুই মহাসুরকে বধ করার জন্য প্রবৃত্তি দান কর । ”

এই ভাবে ব্রহ্মা দশমুখ ও দশ চরণ বিশিষ্টা পরমেশ্বরী মহাকালীর স্তব করলেন । দেবী স্তবে মুগ্ধ হয়ে ভগবান বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ করার জন্য তাঁর চোখ, মুখ, মুখ, নাসিকা , বাহু , হৃদয় এবং বক্ষস্থল থেকে নির্গত হয়ে ব্রহ্মার সম্মুখে প্রকট হলেন । ভগবান বিষ্ণু জেগে উঠলে ব্রহ্মা তাকে সব ঘটনা জানালেন । ততক্ষণে দুই অসুর ও সেখানে এসে গেছে । ভগবান বিষ্ণু সব শুনে যুদ্ধে নামলেন । ২ অসুরের সাথে ভগবান বিষ্ণুর যুদ্ধ বেধে গেলো । যুদ্ধ করতে করতে পাঁচ হাজার বছর কেটে গেল । তবুও দুই অসুর বধ হলেন না । শেষে ভগবান বিষ্ণু ও দুই অসুর ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে বসলেন , ভগবান বিষ্ণু ভাবলেন এই দুই অসুর দেবীর কাছে ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছেন । তাই এদের বধ করা অস্মভব ।

তখন ভগবান নারায়ন সেই মহামায়া কে স্তব করতে লাগলেন । দেবী প্রকট হয়ে জানালেন – “ আপনি যুদ্ধ করুন । আমি শীঘ্র মোহ বিস্তার করে ২ অসুরের বুদ্ধি ভ্রমিত করব ।”

ভগবান আবার যুদ্ধ শুরু করলে দেবী ২ অসুরকে ভ্রমিত করলেন । দুই অসুর গর্বে ভগবান বিষ্ণু কে বললেন – “ ওহে তোমার যুদ্ধ কলায় আমরা প্রসন্ন । তুমি আমাদের কাছে বর চাও ।”

ভগবান বিষ্ণু বললেন – “ তোমরা আমার হাতে বধ্য হও , এই আমার অভিলাষ ।”

দুই অসুর ও বেশ চতুর । তারা বললেল – “ তাই হবে । তবে আমরা স্থলে মরতে চাই ।”

কারন অসুর ২ জন দেখল চার পাশে খালি জল আর জল । তখন ভগবান বিষ্ণু বললেন – “ তোমরা আমার জঙহা তে আসো । আমি সেখানেই বধ করবো ।”
শুনে দুই অসুর নিজের দেহ কে সহস্র যোজন বড় করল । ভগবান বিষ্ণু তার শরীর কে তার দ্বিগুণ করলেন । তারপর ২ অসুরকে নিজ জঙ্ঘা তে রাখলেন । তারপর সুদর্শন চক্র দিয়ে মধু আর কৈটভ এর শিরোচ্ছেদ করলেন । এই ভাবে মধু আর কৈটভের অন্ত হল ।

(শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধ )


শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই দানব ছিল । তারা প্রজাপতি ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করলেন । খুশি হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা বর দিতে আসলেন । ২ দানব বর চাইলো যে , কোন পুরুষ যেনো তাদের বধ করতে না পারে । ব্রহ্মা তাদের তাই বর দিলেন । 

এর পর সেই দুই অসুর মহা ভয়ানক অত্যাচার আরম্ভ করল । তার সাথে যোগ দিল চণ্ড ও মুণ্ড নামক ২ অসুর । রক্তবীজ নামক আর এক অসুর এসে যোগ দিল । রক্তবীজ ব্রহ্মার কাছে বর পেয়েছিলেন যে তার রক্ত মাটিতে যেখানেই পরবে সেখানেই দ্বিতীয় রক্তবীজ তৈরি হবে । 

অসুর দের অত্যাচারে ধর্ম কর্ম লোপ পেল । মুনি ঋষি দের কারাগারে বা তাদের বধ করা হল । অনেক কন্যা রা দানব দের হাতে লাঞ্ছিতা হলেন । অনেক রাজা তাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করল । এভাবে পৃথিবী বিজয় হলে অসুর রা বিশাল সেনা নিয়ে স্বর্গ আক্রমণ করল । দেবতা আর অসুর দের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হল । দেবতারা পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে পলায়ন করলেন । স্বর্গে অসুরদের অধিকার কায়েম হল । পরাজিত দেবগণের দুঃখের সীমা থাকল না। আর ব্রহ্মার বর এর জন্য বিষ্ণু বা মহেশ্বর কেঊ ওই অসুরদের বধ করতে পারবেন না । ভাবতে ভাবতে দেবতাদের মাথায় এল , ভগবতী বর দিয়েছিলেন যে , বিপদে তাকে স্মরণ করলেই তিনি আবির্ভূতা হবেন । ভাবামাত্র দেবতারা হিমালয় এ গিয়ে দেবীর স্তব করতে লাগলেন । 

দেবতাদের স্তব

“ দেবীকে , মহা দেবীকে প্রনাম । সতত কল্যাণময়ী দেবী শিবাকে সতত প্রনাম করি । সৃষ্টিশক্তিরুপিনী ভদ্রাকে প্রনাম । আমরা একাগ্র চিত্তে তাঁকে বার বার প্রনাম করি । রৌদ্রাদেবীকে , নিষ্ঠদেবীকে প্রনাম , গৌরী দেবীকে , জগদ্ধাত্রী দেবীকে প্রনাম করি । জ্যোৎস্নারুপিনী , চন্দ্ররুপিনী মুখস্বরূপাকে সতত প্রনাম করি । কল্যাণীকে প্রনাম করি । বুদ্ধিরুপা ও সিদ্ধিরুপাকে পুনঃ পুনঃ প্রনাম করি , অলক্ষ্মীরূপা , রাজগণের লক্ষ্মীরূপা এবং শিবশক্তিরুপিনী তোমাকে বার বার প্রনাম করি । দুস্তর ভবসাগর পারকারিনী দুর্গাদেবীকে প্রনাম করি । যিনি সারভূতা , সর্বজননী , খ্যাতিরুপিনী এবং যিনি কৃষ্ণাবর্না ও ধুম্রবর্ণা সেই দেবীকে সতত ভক্তি ভরে প্রনাম করি । যিনি বিদ্যা রুপে অতি সৌম্যা এবং আশ্রয়রুপিনী ও ক্রিয়ারুপিনী দেবীকে বারবার প্রনাম করি । যে দেবী সকল প্রানীতে বিষ্ণুমায়া নামে শব্দিতা বা অভিহিতা হন , তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে বুদ্ধিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে নিদ্রারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকলভূতে ক্ষুধারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে ছায়ারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকলভূতে শক্তিরুপে অধিষ্ঠিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে বিষয় বাসনা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে ক্ষমা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে জাতিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে লজ্জারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে শান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে শ্রদ্ধারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে কান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে লক্ষ্মী রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে বৃত্তি বা জিবীকা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে স্মৃতিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে দয়ারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে তুষ্টি রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে মাতৃরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে ভ্রান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যিনি সমস্ত প্রানীর মধ্যে ইন্দ্রিয়গনের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারুপে বিরাজিতা এবং যিনি ক্ষিতি , অপ্ , তেজ , মরুৎ ও ব্যোম , পঞ্চভূতের প্রেরায়িত্রী , সেই বিশ্ব ব্যাপিকা দেবীকে পুনঃ পুনঃ প্রনাম করি । যিনি চিৎশক্তি রুপে এই সারা জগত জুড়ে অবস্থান করছেন তাকে প্রনাম প্রনাম প্রনাম । ”

এই ভাবে দেবতারা দেবী ভবানীর স্তব করতে লাগলেন । সে সময় সেখানে দেবাদিদেব মহেশ্বরের পত্নী ভগবতী পার্বতী তাদের সামনে দিয়ে গঙ্গা স্নানের জন্য যাচ্ছিলেন । দেবী তাদের স্তব শুনে বললেন – “ আপনারা এখানে কার স্তব করিতেছেন ? ”

সেই সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে তার মতন দেখতে আর এক জন দেবী বের হয়ে আসলেন । সেই নব আবির্ভূতা দেবী জানালেন – “ ইহারা আমারাই স্তব করিতেছেন ।”

এই দেবীই আদ্যাশক্তি জগত মাতা অম্বিকা মহামায়া । তিনি দেবী পার্বতীর কোষ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন বলে তার এক নাম কৌষিকী । কথিত আছে এর পর নাকি দেবী পার্বতী কৃষ্ণবর্ণা হয়ে যান । এবং তিনি কালিকা নামে প্রসিদ্ধা হলেন । 

দেবতারা দেবী মহামায়ার কাছে অসুর দের অত্যাচার এর কথা বিস্তারে জানালেন । দেবী অম্বিকা তাদের অভয় দিয়ে জানালেন , তিনি অসুর দের নাশ করবেন । 

দেবী হিমালয়ে সিংহ পৃষ্ঠে বসে মধু পান করতে লাগলেন । সে সময় চণ্ড আর মুণ্ড নামক দুই দানব দেবীকে দেখতে পেলেন । চন্ড মুন্ড একথা গিয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ কে জানালেন । শুম্ভ , নিশুম্ভ সেই নারীর রুপ বর্ণনা শুনে সেই নারীকে পাবার জন্য আকুল হল । নারী লোলুপতা , কামান্ধতা আসুরিক প্রবৃত্তির আর একটি লক্ষণ । শুম্ভ নিশুম্ভ সেই নারীকে পাবার জন্য সুগ্রীব নামক এক অসুর কে পাঠালো । ঠিক হল সুগ্রীব সেই নারী কে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসবে । 

সুগ্রীব হিমালয়ে সেই পর্বত চূড়ায় গিয়ে দেবীকে শুম্ভ নিশুম্ভের পরাক্রম , ঐশ্বর্য এর কথা বলে বিবাহের প্রস্তাব দিল । দেবী শুনে ঈষৎ হাস্য করে বললেন – 
“ শুম্ভ ত্রিভুবনের অধিপতি এবং নিশুম্ভ তারই মতো বীর । কিন্তু এ বিষয়ে আগেই আমি আমার অল্প বুদ্ধিবশতঃ যে প্রতিজ্ঞা করেছি , তার অন্যথা করি কি করে ? আমার প্রতিজ্ঞাটি শোন – যিনি আমাকে যুদ্ধে জয় করবেন , যিনি আমার দর্পচূর্ণ করবেন – এবং যিনি জগতে আমার তুল্য বলশালী হবেন – তিনিই আমার স্বামী হবেন । অতএব মহাসুর শুম্ভ অথবা নিশুম্ভ এখানে এসে আমাকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে শীঘ্র আমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করুন এ বিষয়ে আর দেরীর কি দরকার ?”

দূত জানালেন এটি নিছক উপহাস মাত্র । শুম্ভ ও নিশুম্ভ এর মতো মহা পরাক্রমী ব্যাক্তি আপনার মতো দুর্বলা , অবলা নারীর সাথে কিভাবে যুদ্ধ করবেন ? আপনি চলুন নচেৎ পরে আপনাকে অপমান করে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাবে । 

দেবী জানালেন – “ আমি বিচার বুদ্ধি করে প্রতিজ্ঞা করিনি । অতএব তুমি ফিরে গিয়ে তোমার রাজা শুম্ভাসুর কে সব জানাও । তারপর তিনি যা উচিত মনে করবেন – তাই করবেন ।”

( ধুম্রলোচন বধ )

শুম্ভ ও নিশুম্ভ তার দূত সুগ্রীব এর মুখে এসব কথা শুনে অতিশয় ক্রুদ্ধ হলেন । অসুররাজ শুম্ভ তখন তার সেনাপতি ধুম্রলোচন কে আদেশ দিলেন – “ তুমি নিজ সৈন্যে পরিবৃত হয়ে সেই গর্বিতা নারীকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসো । আর যদি তোমাকে কেউ এ কাজে বাধা দেয় , তাহলে সেই বাধা দানকারী কে তখুনি বধ করবে ।”

এখানে বলা প্রয়োজন নারী অপহরণ একটি আসুরিক প্রবৃতি । আর কোন নারীকে কেশ আকর্ষণ করে নিয়ে আসা আর একটি আসুরিক প্রবৃতি । দুঃশাসন একবস্ত্রা রজঃস্বলা দ্রৌপদী কে কেশ আকর্ষণ করে রাজসভায় নিয়ে এসেছিল । এই পাপেই গোটা কৌরব কূল ধ্বংস হয় । নারী নির্যাতন কারীকে ঈশ্বর ও ক্ষমা করেন না । যাই হোক , ধুম্রলোচন ষাট হাজার সৈন্য নিয়ে দেবীকে আনতে গেল । 


ধুম্রলোচন দেবীকে কাছে গিয়ে বললেন – “আজ যদি আপনি নিজের ইচ্ছায় আমার প্রভু শুম্ভের নিকট না যান তবে আমি আপনাকে কেশ আকর্ষণ করে বলপূর্বক নিয়ে যেতে বাধ্য হব ।”

দেবী বললেন – “ তুমি দৈত্যরাজ শুম্ভ দ্বারা প্রেরিত , বলবান ও সৈন্য পরিবৃত । তুমি যদি আমাকে এভাবে জোর করে নিয়ে যাও , তাহলে আমি আর তোমাকে কি করতে পারি ?”

দেবীর এই কথাই শুনে ধুম্রলোচন দেবীকে ধরতে গেলো । দেবী এই দেখে এক হুঙ্কার দিলেন । সেই হুঙ্কার এই ধুম্রলোচন ভস্ম হয়ে গেল । এর পর দেবীর বাহন পশুরাজ সিংহ প্রচন্ড গর্জন করে কেশর দুলিয়ে অসুর সেনা গনের মধ্যে প্রবেশ করল । তার পর আচরে কামড়ে অসুর দের রক্ত মাংস খেতে লাগল । কাউকে মাথা ছিন্ন করল , কারোর হাত পা বিচ্ছিন্ন করল , কারোর উদর ছিড়ে রক্ত মাংস ভক্ষণ করল , কারোর গোটা শরীর শত টুকরো করে দিল । এভাবে একা সিংহ সমস্ত অসুরদের বিনাশ করল ।


চণ্ড ও মুন্ড বধ )

শুম্ভ ও নিশুম্ভ সব শুনে অতিশয় বিস্মিত হলেন । কারন এক নারীর পক্ষে ধুম্রলোচন এর মতো মহাবীর কে বধ করা সাধারন ব্যাপার নয় । তারা চণ্ড ও মুন্ড নামক ২ দানব কে পাঠালেন । 

চন্ড ও মুণ্ড বহু সেনা , অশ্ব , রথ , হাতী নিয়ে যুদ্ধে আসল । তারা হিমালয়ের চূড়ায় হাস্যরত দেবী অম্বিকা কে দেখতে পেলেন । দেবী চন্ডিকা তাদের দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধা হলেন । ক্রোধে তার বদন মণ্ডল কৃষ্ণবর্ণা হল । দেবী ভ্রুকূটি কুঞ্চিত করলেন । তখন দেবীর ললাট থেকে এক বিকট দর্শনা দেবী প্রকট হলেন । সেই দেবী কালিকা । তিনি বিচিত্র নর কঙ্কাল ধারিনী , নরমুণ্ড মালিনী , ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা , অস্থি চর্মসার দেহ স্বরূপা । অতি ভীষনা , বিশাল বদনা , লোলজিহ্বা , ভয়ঙ্করী , কোটর গতা , আরক্ত চক্ষু বিশিষ্টা এবং সিংহ নাদে দিক মণ্ডল পূর্ণ কারিনী । 


সেই ভয়ংকরা দেবী ভীষন হুঙ্কার দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন । সেই দেবী প্রচুর অসুর সেনাকে মূঠে মূঠে তুলে চিবিয়ে খেতে লাগলেন । অসুরেরা যত অস্ত্র দেবীর পানে নিক্ষেপ করল , দেবীর শরীরে লাগতেই অস্ত্র গুলো ভেঙ্গে যেতে লাগল । দেবী হাজারে হাজারে অসুর সেনাদের ভক্ষণ করতে লাগলেন । রথ , অশ্ব , হাতী গুলোকে ধরে মুখে নিয়ে তা চিবিয়ে খেতে লাগলেন । রক্তে তার দন্ত গুলি লাল হয়ে গেল । কত গুলি অসুরকে দেবী তার চরণ ভারে পিষে বধ করলেন । কোন কোন অসুর দেবীর খড়গের আঘাতে মারা গেল । আবার কিছু অসুর দেবীর দাতে চর্বিত হয়ে মারা গেলো । যুদ্ধক্ষেত্রে এই ভাবে দেবী অসুর দের ধ্বংস করে ফেললেন ।

এ দেখে চণ্ড অসুর হাজার হাজার চক্রাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেবীকে আচ্ছন্ন করে ফেললেন । বাণের প্রভাবে সূর্য ঢাকা পড়ল । দেবী তখন তার খড়গ তুলে ‘হং’ শব্দ করে চন্ডের দিকে ধেয়ে গেল । দেবী চন্ডের চুলের মুঠি ধরে এক কোপে চণ্ডের শিরোচ্ছেদ করে ফেললেন । চন্ড অসুর বধ হল ।

চন্ড নিহত হয়েছে দেখে ক্রোধে মুন্ড দেবীর দিকে ধেয়ে গেলো । দেবী তার রক্তাক্ত খড়গ দিয়ে আর এক কোপে মুন্ড এর শিরোচ্ছেদ করলেন । এভাবে মুণ্ড বধ হল । বাদবাকী জিবীত অসুর রা এ দেখে ভয়ে পালালো । দেবতারা আনন্দে দেবীর জয়ধ্বনি করলেন ।

দেবী চন্ড আর মুণ্ড এর ছিন্ন মস্তক নিয়ে দেবী মহামায়ার কাছে এসে বিকট অট্টহাসি হেসে বললেন – “ এই যুদ্ধরূপ যজ্ঞে আমি আপনাকে চন্ড ও মুন্ড নামে দুই মহাপশুর মস্তক উপহার দিলাম । এখন আপনি নিজেই শুম্ভ ও নিশুম্ভ কে বধ করবেন ।”

দেবী অম্বিকা মধুর স্মরে বললেন – “ হে দেবী , যেহেতু তুমি চন্ড ও মুণ্ডের বধ করে মাথা দুটি আমার নিকট নিয়ে এসেছো , সেজন্য আজ থেকে তুমি জগতে ‘চামুন্ডা’ নামে বিখ্যাত হবে ।”

( রক্তবীজ বধ )


ইতিমধ্যে দেবীর ইচ্ছায় মহেশ্বর দূত হয়ে অসুর দের বোঝাতে গেলেন । দেবী শিবশম্ভু কে দূত হিসাবে পাঠালেন বলে দেবীর এক নাম হল শিবদূতী । মহাদেব অসুর দের অনেক বোঝালেন কিন্তু অসুর রা শুনলো না । অসৎ ব্যাক্তি কখনো ধর্ম কথা শোনে না । চন্ড ও মুন্ডের নিধন সংবাদ পেয়ে শুম্ভ ও নিশুম্ভ ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল । 

শুম্ভাসুরের আদেশে ৮৬ জন প্রধান দৈত্য তাদের সেনা সহ , কম্বু বংশ জাত ৮৪ জন দৈত্য তাদের সেনা সহ , কোটিবীর্য নামে অসুর দের ৫০ টি বংশ , ধুম্র বংশের অসুর দের ১০০ বংশ সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করল । কালক , দৌ্হৃরদ , মৌর্য , কালকেয় অসুর রা যুদ্ধে প্রস্থান করল । 

অসুর দের পদভরে পৃথিবী কাপতে লাগল । ধূলা বালি উড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ঘোড়া রথ ছুটে চলল । হস্তীবাহিনীর পদ চাপে মেদিনী দুলতে লাগল । অসুর রা বিবিধ বাজনা , দুন্দভি , শিঙা বাজিয়ে নানা ভাবে গর্জন করে প্রানঘাতক অস্ত্র গুলি নাচাতে নাচাতে চলল । ঘন ঘন রনদামামা , রনভেরী বাজতে লাগল । 

অসুর দের আসতে দেখে দেবী মহামায়া শঙ্খধ্বনি , ঘণ্টাধ্বনি করতে লাগলেন । তার ধ্বনি দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ল । দেবীর ধনুষ্টঙ্কার এ চারপাশ কেপে উঠল । পশুরাজ সিংহ ঘন ঘন কেশর ও লেজ দুলিয়ে ভয়ানক গর্জন করতে লাগলেন । 

এসময় ব্রহ্মার থেকে হংসযুক্ত বিমানে জপমালা ও কমুন্ডল নিয়ে দেবী ব্রহ্মাণী আসলেন । মহেশ্বর এর থেকে ষাঁড় এর পীঠে চেপে ত্রিশূল নিয়ে আসলেন । তার পরনে ব্যাঘ্রচর্ম , কপালে অর্ধচন্দ্র , অঙ্গে সর্প । দেবীর নাম মহেশ্বরী । কার্তিক এর থেকে দেবী কৌমারী দেবী প্রকট হয়ে আসলেন , যিনি ময়ূরবাহনা ও হস্তে তির আর ধনুক । শ্রী নারায়নের থেকে প্রকট হয়ে আসলেন বৈষ্ণবী শক্তি , যার হাতে চক্র , শঙ্খ , গদা , পদ্ম , ধনুক-বান , খড়গ । ইনি গরুর পক্ষী বাহনা । বারাহী দেবী আসলেন । নারসিংহী দেবী আসলেন । তারপর ১০০ চক্ষু বিশিষ্টা হস্তী বাহনা ঐন্দ্রী দেবী বজ্র নিয়ে আসলেন । শিবদূতী ও কালিকা দেবী আসলেন । 

রক্তবীজ প্রচুর সৈন্য সামন্ত নিয়ে আসলে দেবী মহামায়া , কালিকা কে বললেন – “ আমার প্রীতির জন্য আপনি সত্বর অসুর দের বিনাশ করুন ।”

দেবী কালিকার থেকে অসংখ্য দেবীগণের সৃষ্টি হল । অসুর রা এসে দেবী কালিকা কে বাণ দ্বারা আছন্ন করলে দেবী ভীষণ তান্ডব শুরু করলেন । তিনি তার তীব্র খড়গ দ্বারা দানব দের শিরোচ্ছেদ করতে লাগলেন , চরণে পিষ্ট করে বধ করতে লাগলেন , কাউকে আবার গিলে খেয়ে ফেললেন । দেবী মহামায়া চক্র শূল , বাণ , খড়গ , গদা , কুঠার দ্বারা অসুর দের ধ্বংস করতে লাগলেন । 

ব্রহ্মাণী দেবী কমুন্ডল এর জল ছিটিয়ে অসুর দের ভস্ম করতে লাগলেন । বৈষ্ণবী দেবী চক্র দিয়ে অসুর দের টুকরো টুকরো করে দিলেন । তাঁর গদার আঘাতে অসুর রা রক্তবমি করতে করতে মারা গেল । রথ , অশ্ব , হস্তী গুলো ধ্বংস হল । কৌমারী দেবীর ভীষন বানবৃষ্টি তে অসুর দের দেহ গুলো টুকরো টুকরো হতে লাগল । ঐন্দ্রী দেবীর বজ্র প্রহারে অসুরেরা ভস্ম হতে লাগল । বারাহী দেবী তার তীক্ষ্ণ দন্তের দ্বারা অসুর দের ছিড়ে ফেলতে লাগলেন । নারসিংহী দেবী তার নখ দ্বারা অসুর দের ছিন্নবিচ্ছিন্ন করলেন । শিবদূতী দেবীর অট্টহাস্যে অসুর রা মূর্ছিত হলে দেবী সেই মূর্ছিত অসুর দের গিলে খেলেন । দেবীর বাহন সিংহ অসুর দের আঁচরে কামরে শেষ করতে লাগলেন । 

রক্তবীজ এ দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে আসলেন । । রক্তবীজ ব্রহ্মার কাছে বর পেয়েছিলেন যে তার রক্ত মাটিতে যেখানেই পরবে সেখানেই দ্বিতীয় রক্তবীজ তৈরি হবে । রক্তবীজ প্রথমেই দেবী ঐন্দ্রীর সাথে যুদ্ধ করলেন । ঐন্দ্রী দেবীর ব্জ্রপ্রহারে ক্ষতবিক্ষত হলে তার শরীর থেকে অনেক বিন্দু রক্ত পড়ে আরো রক্তবীজ এর সৃষ্টি হল । এভাবে অনান্য দেবী দের অস্ত্রের আঘাতে রক্তবীজ রক্তাক্ত হলে অনেক রক্তবীজ এর সৃষ্টি হল । দেবতারা এ দেখে খুব ভয় পেলেন । 

দেবী অম্বিকা তখন কালিকাকে বললেন – “ হে চামুন্ডে , তুমি শীঘ্র তোমার বদন বিস্তৃত কর । এবং তোমার ওই বিস্তৃত মুখ দিয়ে আমার শস্ত্রের আঘাতে রক্তবীজের শরীর থেকে যে রক্তবিন্দু ঝরবে তা খেয়ে ফেলবে । সেই সঙ্গে ওই রক্তবিন্দু থেকে জন্মলাভ করা অসুর দের খেতে খেতে তুমি সারা যুদ্ধক্ষেত্র ঘুরে বেড়াও । তাহলেই এই রক্তবীজ দৈত্য ক্রমশঃ রক্তশূন্য হয়ে পড়বে । আর তাতেই তার ক্ষয় বা মৃত্যু হবে । পরন্তু তুমি দৈত্যদের খেয়ে ফেলতে থাকলে আর উগ্র দৈত্যদের জন্ম হবে না । ”

দেবী অম্বিকা এই বলে নিজের শাণিত ত্রিশূল দিয়ে রক্তবীজ কে আঘাত করলেন । দেবী কালিকা রক্তবীজের রক্ত খর্পর ( করোটি ) এ নিয়ে পান করলেন । এই ভাবে অম্বিকার ত্রিশুলে রক্তবীজ ভীষন ভাবে আহত হল । তার এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পরল না । দেবী কালিকা তার সমস্ত রক্ত পান করলেন । এভাবে রক্তবীজ এর সমস্ত রক্ত দেবী কালিকা পান করলে রক্তবীজের মৃত্যু হল । 

এর পর দেবী কালিকা সমস্ত যুদ্ধখেত্র ঘুরে বেড়ালেন আর রক্তবীজ এর দেহ থেকে সৃষ্টি হওয়া অনান্য রক্তবীজ দের খড়গ দ্বারা শিরোচ্ছেদ করে তাদের রক্ত পান করতে লাগলেন । রক্তপান করতে করতে দেবী ভয়ানক হয়ে উঠলেন । তাহার জিহ্বা ও দন্ত রক্তবর্ণ হল । এভাবে সমস্ত রক্তবীজ দের নাশ হল । দেবী কালিকার অট্টহাস্যে চারিদিক পরিপূর্ণ হল । দেবীর হাতে অসুর , হস্তী , অশ্ব , রথ ধ্বংস হতে লাগল । 

শেষে এমন হল দেবী কালিকা পলায়মান অসুর দের বধ করে তাদের রক্ত পান করতে লাগলেন । দেবী মহামায়ার ডাকেও তিনি ফিরলেন না । দেবতাগন দেবীকে শান্ত করার জন্য অনেক স্তব স্তুতি করলেও দেবী শান্ত হলেন না । উপায় না দেখে দেবগণ মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন । মহাদেব শব রুপ হয়ে দেবী কালিকার যাত্রাপথে শুয়ে থাকলেন । দেবী কালিকা মহাদেব কে দেখতে পেলেন না । তিনি তাঁর ডান চরণ মহাদেবের বুকে রাখলেন । যখন তিনি নীচে তাকিয়ে দেখলেন স্বয়ং স্বামী মহাদেব , তখন তিনি লজ্জায় তার জিহ্বা বের করলেন ।এর পর দেবী কালিকা শান্ত হলেন।



(দেবীর হাতে মহিষাসুরের সেনাদের বধ)

মহিষাসুরের অসুর বাহিনী রথ, পদাতিক , হাতী , অশ্ব বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে ধাবমান হল । সেনাপতি চিক্ষুর , চামর রথ , গজ , পদাতিক , অশ্ব চতুরঙ্গ সেনা নিয়ে যুদ্ধে গেলো । ষাট হাজার রথ নিয়ে উদগ্র নামক অসুর এবং এক কোটি রথ নিয়ে মহাহনু নামক অসুর আসলো । বাস্কল নামক অসুর ষাট লক্ষ রথ , অসিলোমা ৫ কোটি রথ নিয়ে আসলো । বিড়ালাক্ষ নামক অসুর ৫০০ রথে পরিবেষ্টিত হয়ে যুদ্ধে আসল ।
অনান্য অসুর রা নানা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে আসল । মহাযুদ্ধ শুরু হল । অসুরেরা নানা অস্ত্র শস্ত্র বর্ষণ করতে শুরু করল ।

ভগবতী মহামায়া নানা অস্ত্র প্রয়োগ করে অসুর দের অস্ত্র গুলি ধ্বংস করতে লাগলেন । দেবী তার প্রচণ্ড অস্ত্র দ্বারা দানব দের বধ করতে লাগলেন ।
দেবীর বাহন পশুরাজ সিংহ ভয়ানক গর্জন করে রন ক্ষেত্রে প্রবেশ করে অসুরদের ওপর আঘাত হানলো । সিংহ তার নখ দন্ত দিয়ে অসুরদের মেরে রক্ত মাংস খেতে লাগল । অসুর দের কারো মুন্ড কাটা গেলো, কারোর শরীর রক্তাক্ত ও অর্ধেক হয়ে গেলো ।
দেবী চক্র , বাণ , ত্রিশূল , গদা , কুঠার দিয়ে অসুরদের বধ করতে লাগলেন । দেবীর চক্রে অসুর রা খন্ড বিখন্ড হতে লাগল । শূল বিদ্ধ হল । গদার আঘাতে রক্তবমি করতে করতে দানব রা প্রান ত্যাগ করতে লাগলো । দেবীর খড়গে কিছু অসুরদের মাথা কাটা গেল । কারোর হাত কাটা পরল । কারোর দেহ আড়াআড়ি ভাবে অর্ধেক হল । দেবীর বানে অসুরেরা মরতে লাগল । কারোর মুণ্ড উড়ে গেলো । কারোর হাত পা কাটা পড়লো । যুদ্ধ ভূমি রক্তে ভেসে গেলো । সিংহ এর দাত নখ অসুরদের রক্তে লাল হয়ে গেল । দেহের স্তূপ জমে গেলো । দেবী র অস্ত্রে রথ , হস্তী , অশ্ব টুকরো টুকরো হতে লাগলো । এই ভাবে দেবী ভবানী অসুরদের নিধন করতে লাগলেন ।

চিক্ষুর কে দেবী ত্রিশূল দ্বারা বধ করলেন । চামর অসুর যুদ্ধ করতে আসলে দেবীর বাহন সিংহ তাকে কামড় বসিয়ে তার গলা থেকে মুন্ড টা আলাদা করে দিলো । এর পর দেবী উদগ্র ও করাল নামক অসুরকে বধ করলেন । গদার প্রহারে উদ্ধতাসুর কে বধ করলেন । তারপর বাণ এর আঘাতে তাম্র অসুর ও অন্ধক নামক অসুরকে বধ করলেন । ত্রিশুল দিয়ে উগ্রাস্য , উগ্র বীর্য , মহাহনু নামক অসুরকে বধ করলেন । এর পর দুর্ধর ও দুর্মুখ নামক ২ অসুরকে তরবারি দিয়ে বধ করলেন । নিজের সেনা দের ধ্বংস হতে দেখে মহিষাসুর যুদ্ধে আসলেন ।


( মহিষাসুর এর যুদ্ধে আগমন)

মহিষাসুর যুদ্ধে এসে ভীষণ সংগ্রাম আরম্ভ করলেন । দেবী নানা অস্ত্রে মহিষের অস্ত্র গুলিকে ধ্বংস করতে লাগলেন । মহিষাসুর তার শিং দিয়ে পাহার গুলিকে দেবীর দিকে ছুড়তে লাগলেন । তার লেজের আঘাতে সমুদ্র উথলে উঠতে লাগল । দেবী চন্ডীকা তখন পাশ নিক্ষেপ করে মহিষাসুর কে বেঁধে ফেললেন । মহিষাসুর তখন মহিষ রুপ ছেড়ে সিংহ রুপ ধরলেন । দেবী খড়গ দিয়ে সেই সিংহ এর মাথা কাটলেন । তখন মহিষাসুর একটি খড়গ ঢাল ধারী পুরুষ মূর্তি ধারন করলেন । দেবী বান বর্ষণ করে সেই পুরুষ ও তার ঢাল খড়গ কে ছিন্ন বিছিন্ন করলেন । এর পর মহিষাসুর হস্তী রুপ ধরলেন । শুঁড় দিয়ে দেবীর বাহন কে পেঁচিয়ে ধরে টানতে লাগলেন । দেবী খড়গ দিয়ে সেই শুঁড় কেটে ফেললেন । তখন মহিষাসুর পুনরায় মহিষ মূর্তি ধরে দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগলেন । দেবী মহামায়া তখন দিব্য সুরা পাত্র থেকে মধু খেতে লাগলেন । মহিষাসুর তখন গর্বে উদ্ধত হয়ে গর্জন করতে লাগলেন ।

দেবী মহামায়া তখন বললেন – “ ওরে মূঢ় , যতক্ষণ আমি মধু পান করি , ততক্ষণ তুই গর্জন কর । আমি তোকে বধ করলে ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতা গন এখানেই এখুনি আনন্দধ্বনি করবেন । ”

এর পর দেবী এক লাফ দিয়ে মহিষাসুরের পীঠের ওপর তার গলাটি পায়ের দ্বারা চেপে ধরলেন । তারপর দেবী তার শূল দিয়ে মহিষাসুরের বুক বিদ্ধ করলেন । তার পর মহিষাসুরের মুখ দিয়ে আর একটি মহাসুর বের হতেই দেবী তার খড়গ দিয়ে সেই অসুরের মাথা কেটে ফেললেন । এই ভাবে মহিষাসুর এর বধ হল । দেবতারা আনন্দিত হলেন । অবশিষ্ট অসুর সেনাগন হায় হায় করতে করতে পালিয়ে গেলো ।

ত্রিলোকে মঙ্গল বাদ্য বেজে উঠলো । সকলে আদিশক্তির স্তব করতে লাগলেন । অপ্সরা , গন্ধর্ব , কিন্নর রা নৃত্যগীত করতে লাগলেন । স্বর্গ রাজ্য তে আবার দেবরাজ ইন্দ্র ও দেবতাগন পুনধিষ্ঠিত হলেন । পৃথিবী তে শান্তি নেমে আসলো । ঋষি মুনিরা আনন্দে ধর্মাচরণ করতে লাগলেন ।


(দেবতাগন এর স্তবস্তুতি)

দেবী মহামায়া কে সকল এ স্তব করতে লাগলেন

“ যে দেবী আপন শক্তির প্রভাবে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পরিব্যাপ্তা হয়ে আছেন , যিনি সমস্ত দেবতাগনের ঘনীভূতা মূর্তিস্বরূপা , যিনি দেবতা ও মহর্ষিগনের আরাধ্যা , সেই জগতের মাতা অম্বিকা দেবীকে আমরা ভক্তিপূর্বক প্রনাম করছি । তিনি আমাদের সকল রকম মঙ্গল বিধান করুন । বেদে ভগবান বিষ্ণুকে সহস্রবদন । সেই সহস্রবদন বিষ্ণু , ব্রহ্মা , শিব যাঁর অতুলনীয় প্রভাব ও শক্তি বর্ণনা করতে সমর্থ নন , সেই দেবী চন্ডীকা সমগ্র বিশ্ব প্রতিপালনের জন্য এবং আমাদের অমঙ্গলজনক ভয় বিনাশের জন্য ইচ্ছা করুন । যিনি স্বয়ং পুন্যবান ব্যাক্তিদের গৃহে লক্ষ্মীস্বরূপা এবং পাপাচারী লোকেদের গৃহে অলক্ষ্মীস্বরূপা , যিনি শুদ্ধচিত্ত ব্যাক্তিগনের হৃদয় এ সদ্ বুদ্ধি স্বরূপা ও সজ্জনগনের লজ্জারুপা , সেই তোমাকে আমরা ভক্তিভরে প্রনাম করি । হে দেবি , তুমি সমগ্র জগত প্রতিপালন কর । হে দেবী , দেবতা , দৈত্য , প্রমথ ও ব্রহ্মর্ষিগনের মধ্যে আপনার এই অনিবার্য ও অচিন্তনীয় স্বরূপ তোমার অসুর নাশকারী অসীম মহাবীর্য , সংগ্রামে তোমার এই অতি অদ্ভূত আচরণসমূহ আমরা কি প্রকারে বর্ণনা করব? তুমি সম্যক জগতের মূল কারণ । তুমি সত্ত্ব প্রভৃতি ত্রিগুণময়ী হলেও রাগ , দ্বেষ যুক্ত ব্যাক্তিগন তোমাকে জানতে পারে না । এমনকি তুমি বিষ্ণু ও শিব প্রভৃতি দেবতাদের অজ্ঞাত । তুমিই সকলের আশ্রয়স্বরূপা । ব্রহ্মা থেকে কীট পর্যন্ত এই অখিল বিশ্ব তোমার একাংশ মাত্র । কারণ তুমিই ত সকলের আশ্রয় স্বরূপা । তুমিই বিকার রহিতা পরমা আদ্যা প্রকৃতি । হে দেবী , যে মন্ত্রের সম্যক উচ্চারণে সকল দেবতাবৃন্দ তৃপ্তিলাভ করেন সেই স্বাহামন্ত্র তুমিই এবং পিতৃগনের তৃপ্তির স্বধামন্ত্র তো তুমিই । এজন্যই দেবযজ্ঞ ও পিতৃযজ্ঞ অনুষ্ঠানকারী সকল ব্যাক্তিগন স্বাহা ও স্বধা মন্ত্ররূপে উচ্চারন করে থাকেন । হে দেবী , যে পরাবিদ্যা মুক্তির কারণ , যোগশাস্ত্রে বর্ণিত দুঃসাধ্য যম নিয়ম প্রভৃতি মহাব্রত যার সাধন – তুমিই সেই ভগবতী পরমা ব্রহ্মবিদ্যা । সেজন্য যারা জিতেন্দ্রিয় তত্ত্বনিষ্ঠ , সমস্ত দোষবর্জিত , শুদ্ধচিত্ত ও মুমুক্ষু সেই মুনিগন তোমার সাধনা করে থাকেন । হে দেবী । তুমিই শব্দ ব্রহ্মস্বরূপিণী । তুমিই বিশুদ্ধ ঋক ও যজুঃ মন্ত্রসমূহের এবং উদাত্তদি স্বর ও মধুর পদোচ্চারন বিশিষ্ট সামমন্ত্র
সমূহের আশ্রয় । তুমি বেদত্রেয় রুপিনী ও সর্ব ঐশ্বর্যময়ী দেবী ভগবতী । তুমিই জগত সংসার পালনের জন্য কৃষি বাণিজ্য প্রভৃতি বৃত্তি স্বরূপা এবং সারা জগতের পরম দুঃখ বিনাশকারিনী । হে দেবী যাঁর কৃপায় সর্ব শাশ্ত্রের মর্ম অবগত হওয়া যায় – তুমিই সেই মেধারুপিনী সরস্বতী । দুস্তর সংসার সমুদ্রের অদ্বিতীয়া তরণী স্বরূপা দুর্গাও তুমি । তুমিই নারায়নের হৃদয় বিহারিনী লক্ষ্মীদেবী এবং তুমিই মহাদেবের হৃদয় বিলাসিনী দেবী গৌরী । হে দেবী , তোমার ঈষৎ হাস্যময় , নির্মল , পূর্ণচন্দ্রের মত এবং উত্তম স্বর্ণ প্রভাতুল্য বদন মণ্ডল দেখেও মহিষাসুর ক্রোধভরে হটাত প্রহার করল – এ ঘটনা অত্যন্ত আনন্দের । হে দেবী , তোমার কুপিত , ভ্রকুটি ভীষণ নব উদিত পূর্ণচন্দ্রের তুল্য প্রভা সমন্বিত বদন মণ্ডল দেখেও মহিষাসুর সাথে সাথে প্রান ত্যাগ করেনি এ বড়ই আশ্চর্যের বিষয় ! কারন কুপিত যমকে দেখে কেউ কি বাঁচতে পারে ? হে দেবী , তুমি প্রসন্না হও । কারন তুমিই জগতের কল্যাণকারিনী । তুমিই প্রসন্না হলেই জগতের কল্যাণ হয় । আর তুমি যদি তার বিপরীত হও । অর্থাৎ ক্রুদ্ধা হও তাহলে বংশ সমূহ নষ্ট হয় । ”

দেবতারা আরো বললেন
“ দেবী তোমার শূলের দ্বারা আমাদের রক্ষা কর । হে অম্বিকে তোমার খড়গ দ্বারাও আমাদের রক্ষা কর । হে চন্ডীকে , হে ঈশ্বরী , তোমার শূলকে সঞ্চালিত করে আমাদের পূর্বদিকে রক্ষা কর । পশ্চিম ও উত্তর এবং দক্ষিণ দিকেও রক্ষা কর । ত্রিভুবনে তোমার যে সকল সৃষ্টি – স্থিতি কারিনী সৌম্যমূর্তি এবং সংহার কারিনী রুদ্রমূর্তি বিরাজিত তাদের দ্বারা আমাদিগকে ও সমগ্র জগত বাসীকে রক্ষা কর । তোমার করপল্লবে বিরাজমান খড়গ , শূল , গদা প্রভৃতি যে সকল অস্ত্র আছে , সে সকল দ্বারা আমাদের সর্বপ্রকারে রক্ষা কর । ”

এই ভাবে দেবতারা স্তব করে ভক্তিভরে দেবীকে পূজো করলে দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাদের বর দিতে চাইলেন ।
দেবতারা বললেন – “ দেবী ভগবতী , আপনি আমাদের শত্রু  মহিষাসুকে বধ করেছেন , এতেই আমাদের জন্য সব করা হয়েছে । বাকী আর কিছুই নেই । তবু যদি কৃপা করে আমাদের বর দিতেই চাও , তবে আমাদের প্রার্থনা – যখনই আমরা তোমাকে বার বার স্মরণ করব , তখনই তুমিই আবির্ভূতা হয়ে আমাদের ঘোর বিপদ গুলি দূর করে দেবে । হে দেবী যে মানুষ এই স্তব দ্বারা তোমার স্তুতি করবে , আমাদের প্রতি প্রসন্না হয়ে তুমি সব সময় তাদের জ্ঞান , সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য সহ ধন , সম্পদ ও স্ত্রী পুত্রাদি বৃদ্ধি করবে ।”

দেবী মহামায়া “ তাই হোক ” বলে অদৃশ্য হলেন ।

( মহিষাসুর বধ )

পুরাকালে রম্ভ নামক এক অসুর মহাদেবের কাছে ( মতান্তরে অগ্নি দেব ) বর লাভ করে যে সে এমন একটি বলশালী পুত্র লাভ করবে যে দেবতাদের পরাজিত করতে পারবে ।
সেই রম্ভাসুরের পুত্র ছিল মহিষাসুর । সে কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছে বর লাভ করেন – সে পুরুষের অবধ্য কেবল নারীর হাতেই বধ্য হবে ।
ব্রহ্মার বর পেয়ে সেই অসুর ভয়ানক অত্যাচার আরম্ভ করল । অসুর রা ভগবানকে মানে না । মুনি ঋষি দের আশ্রম ধ্বংস করে । নিজেদের কেই ভগবান মানে । নারী অপহরণ ধর্ষণ করে । ধর্ষণ একটি আসুরিক প্রবৃত্তি । নরকাসুর প্রচুর নারীকে অপহরণ করে বিয়ে করেছিল । রাবন রম্ভা নামক অপ্সরা কে ধর্ষণ করেছিলেন । মহিষাসুর আর তার প্রবল দানব সেনাও তাই করে বেড়াতে লাগলো । পৃথিবী বিজয় হলে তারা স্বর্গ আক্রমণ করে দখল করল । দেবতাদের পরাজিত করে মহিষাসুর ইন্দ্রাসনে বসলেন । অসুর রা অপ্সরা দিগকে বন্দী করলেন । ইন্দ্র দেবের পত্নী শচী দেবী পর
মা সুন্দরী । মহিষাসুর হাত থেকে বাচার জন্য তিনিও স্বর্গ ছেড়ে চলে গেলেন ।

লাঞ্ছিত ও পরাজিত দেবগণ প্রজাপ্রতি ব্রহ্মাকে নিয়ে হরি আর হর এর কাছে গেলেন । সেখানে মহিষাসুরের ও তার দানব সেনার অত্যাচারের কথা জানালে ত্রিদেব ভীষন ক্রোধ করলেন । ক্রোধে ত্রিদেবের বদন থেকে জ্যোতি বের হতে লাগলো । অনান্য সকল দেবতাদের শরীর থেকে জ্যোতি বের হয়ে তা পাহার প্রমান জ্যোতি হয়ে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে প্রবেশ করল । সেখানে সেই জ্যোতি এর দিব্য নারী রুপ ধারন করল । মহাদেবের তেজে তার মুখ , ব্রহ্মার তেজে তাঁর পদ যুগল , শ্রী হরির তেজে তাঁর বাহু সমূহ , যমের তেজে কেশ রাশি , চন্দ্রের তেজে স্তন্য যুগল , ইন্দ্রের তেজে শরীরের মধ্য ভাগ , বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু দ্বয় , পৃথিবীর তেজে তার নিতম্ব , সূর্যের তেজে চরণের আঙ্গুল , অষ্টবসুর তেজে হাতের আঙ্গুল , কুবেরের তেজে নাসিকা , দক্ষ ও অনান্য প্রজাপতি গনের তেজে দাঁত , অগ্নির তেজে তার ৩ টি চোখ , প্রাতঃ এবং সায়ং এই ২ সন্ধ্যা দেবীর তেজে ২ কর্ণ তৈরি হল । এই ভাবে বিশ্বকর্মা ও অনান্য দেবতাদের তেজে মহামায়ার আবির্ভাব হল ।

দেবী যুদ্ধে যাবেন । তাই তার অস্ত্র দরকার । প্রত্যেক দেবতা ও ত্রিদেব তাদের অস্ত্র থেকে অনুরূপ আরো একটি অস্ত্র তৈরি করে দেবীকে দিলেন । মহাদেব ত্রিশূল , বিষ্ণু চক্র , বরুণ দেব শঙ্খ , অগ্নিদেব শক্তি অস্ত্র , পবন ধনুক ও বাণে পূর্ণ ২ টি তূন , ইন্দ্র বজ্র , ঐরাবত ঘণ্টা , মৃত্যুদেব কালদন্ড , জলদেবতা পাশ , ব্রহ্মা রুদ্রাক্ষ মালা ও কমুন্ডল , সূর্য দেব উজ্জ্বল কিরণ এবং নিমেষ দেবতা কালাভিমানী দেবতা খড়গ ও ঢাল , ক্ষীর সাগর বস্ত্র – দিব্য চূড়া – ২ টি কুণ্ডল – সকল হাতের বলয় – শুভ্র ললাট ভূষন – সকল বাহুতে কেয়ূর – নূপুর – কণ্ঠের ভূষণ – অঙ্গুরি , বিশ্বকর্মা অভেদ বর্ম , সমুদ্র দেবতা পদ্মের মালা ও হাতে পদ্ম , কুবের সুরা পূর্ণ পানপাত্র , নাগরাজ বাসুকী নাগ হার দিলেন । গিরিরাজ হিমালয় দিলেন একটি বলশালী সিংহ । অনান্য দেবতারা নানা অস্ত্র দিলেন ।

দেবী সিংহ পীঠে আরোহণ করে অট্টহাস ও গর্জন করতে লাগলেন । দেবীর গর্জনে সপ্তলোক কম্পিত হতে লাগলো । সিংহ এর গর্জনে চতুর্দিক ছেয়ে গেলো । দেবী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিতা হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন ।
দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারের কথা জানালো । দেবী তাদের অভয় দিলেন ।

অপরদিকে মহিষাসুর গুপ্তচর এর মাধ্যমে খবর পেলো যে দেবতারা তাকে বধ করার জন্য এক নারীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছে । একথা যেনে অসুরেরা হাস্য করতে লাগল । অসুরেরা দেবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল ।

মেধস মুনি এভাবে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কে দেবীর লীলা শোনালেন । রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য দেবীর পূজা করতে মনস্থির করলে মেধস মুনি তাদের দেবীর রূপ সম্পর্কে বললেন । তিনি মহালক্ষী , মহাসরস্বতী ও মহাকালীর রূপ সম্পর্কে বললেন । 

রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য নদীতীরে গিয়ে দুর্গাদেবীর মাটির মূর্তি তৈরি করে পুস্প , ধূপ – দীপ , হোম , নৈবেদ্যাদি দিয়ে পূজো করতে লাগলেন । কথিত আছে তাঁরা নিজের দেহের রক্ত দিয়ে দেবীকে পূ

জো করেছিলেন । তার পর তারা তিন বছর দেবীর তপস্যা করেন । দেবী খুশী হয়ে তাঁদের দর্শন দিলেন । তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূরন হওয়ার বর দিলেন । রাজা সুরথ এবার সৈন্য সামন্ত জুটিয়ে শত্রু রাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন । দেবীর আশীর্বাদে রাজা সুরথ শত্রু দের ধ্বংস করে নিজের হারানো রাজ্য পুনঃ অধিকার করলেন । অপর দিকে সমাধি বৈশ্য মনে মনে ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তির ইচ্ছা করেছিলেন । দেবী চন্ডীকার আশীর্বাদে সমাধি বৈশ্য ব্রহ্মজ্ঞান পেলেন । রাজা সুরথ দেবীর কাছে বর পেয়েছিলেন যে – পরজন্মে সুরথ রাজা সূর্যদেবের ঔরসে তাঁর পত্নী সবর্নার গর্ভে জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে সাবর্ণি নামে অষ্টম মণু হবেন ।


ক্ষমা প্রার্থনা


চন্ডী পাঠের পর অবশ্যই আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা পাঠ করতে হয় । এতে দেবী প্রসন্না হন ।

“ হে দেবী মহেশ্বরী । এই শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠ করার সময় ( মন্ত্রে ) আমার যে সকল অক্ষর পরিভ্রষ্ট ও মাত্রাহীন হয়েছে , তোমার কৃপায় সে সকল সম্পূর্ণ হোক ।

হে জগদম্বিকে , এই পাঠে আমি যে বিসর্গ , চন্দ্রবিন্দু বা অক্ষরবিহীন ( মন্ত্রে ) উচ্চারন করেছি , তা তোমার কৃপায় সম্পূর্ণ হোক এবং যেন আমার সঙ্কল্প সদাই সিদ্ধ হয় ।

হে জগদম্বে , সদ্যই তোমার এই স্তব পাঠ করার সময় ভক্তিতে বা অভক্তিতে , তাড়াতাড়ি পরার ফলে , স্পষ্ট বা অস্পষ্ট উচ্চারিত হওয়ায় এবং অনুস্বার , বিসর্গ , পদ , সমাস , বা বর্নাদির যে বিচ্যুতি ঘটেছে – যা মোহরূপে বা অজ্ঞানতার কারণে পাঠ করা হয়েছে বা পাঠ করা হয়নি , হে বরদায়িনী দেবী ভগবতী , তোমার প্রসাদে সে সকলই পূর্ণ হোক । হে দেবী , তুমি আমার প্রতি প্রসন্না হও ।

হে জননী ভগবতী , তুমি আমার প্রতি প্রসন্না হও । হে ভক্তবৎসলে , আমার প্রতি প্রসন্না হও । হে দেবী আমাকে কৃপা কর । হে দেবী দুর্গে , তোমাকে ভক্তিভরে প্রনাম করি ।

হে শঙ্করপ্রিয়ে , তোমার এই মাহাত্ম্য – যার জন্য পাঠ করা হল , তার বাড়ীর ও শরীরের সর্বদা কল্যাণ বা শান্তি হোক ।”

গদ্যে শ্রী শ্রী চন্ডীর মূল Post গুলি করেছেন সুমন বসাক 


Facebook Comment

আজকের তারিখ