( দেবীর আবির্ভাব )
বহু আগে যখন দ্বিতীয় মনু ছিলেন তখন চৈত্রের বংশ জাত রাজা সুরথ পৃথিবীর এক মাত্র অধীশ্বর ছিলেন । তিনি তার প্রজাদের পুত্রসম স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে রাজ্য শাসন করতেন । একদা যবন রাজারা তার রাজ্য আক্রমণ করেন । যুদ্ধে রাজা সুরথ এর পরাজয় হয় । তার রাজ্য , সিংহাসন , ধন, সম্পদ সব শত্রুর হাতে চলে যায় । তিনি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন । মনের দুঃখে তিনি বনে চলে যান । সেখানে তিনি বিষন্ন মনে ঘুরতে থাকেন ।
বনে গিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে রাজা খানিকটা এগিয়ে গেলেন । সেখানে তিনি এক মুনির আশ্রম দেখতে পেলেন । আশ্রমে ঢুকে জানতে পারলেন এটি মেধস্ মুনির আশ্রম । রাজা সেখানে চিন্তা করতে লাগলেন “ অতীতে আমার পূর্বপুরুষ গন যে রাজ্যকে সুন্দর ভাবে পালন করিয়াছেন , তাহা এখন দুষ্ট অমাত্য দের দখলে । তারা এখন সকল প্রজাদের রক্ষা করিতেছেন কিনা ? জানি না সেই মহাবলবান মদস্রাবী প্রধান হাতিটি শত্রুদের অধিকৃত হয়ে ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছে কিনা ? যে সকল রাজ কর্মচারী আগে পারিতোষিক , বেতন , খাদ্যদ্রব্য পেয়ে আমার অনুগত থাকত , আজ তারা অন্যের দাসত্ব করছে । আমি এত কষ্ট করে , দুঃখ করে যে বিশাল ধনরাশি জমা করেছিলাম তা ঐ অমিতব্যয়ী গন অপচয় করে শেষ করবে” ।
অপর দিকে সমাধি নামক এক বৈশ্য সেই বনে বিষন্ন মনে চলে আসেন । সমাধি বৈশ্য এক বিত্তশালী ঘরের ছিলেন । তিনি ছিলেন ধনী । কিন্তু তার স্ত্রী ও পুত্রেরা সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে তাকে পরিত্যাগ করেন । ঘটনাচক্রে সমাধি বৈশ্য বনে ভ্রমণ করতে করতে মেধস মুনির আশ্রমে পৌছালেন ।
সমাধি বৈশ্য কে সেখানে দেখে রাজা সুরথ তার পরিচয় জানতে চাইলে সমাধি বৈশ্য তার পরিচয় ও দুঃখের কারণ জানালেন । সমাধি বৈশ্য জানালেন “ আমার অসাধু স্ত্রী ও পুত্রেরা ধনের লোভে আমাকে পরিত্যাগ করেছে । আমি এখন ধনহীন দরিদ্র । আমার আত্মীয় কুটুম্ব , বন্ধু বান্ধব রা আমাকে পরিত্যাগ করায় আমি মনে অনেক দুঃখ নিয়ে বনে চলে এসেছি । কিন্তু এখানে এসেও আমি আমার স্ত্রী , পুত্র ও বন্ধু দের ভুলতে পারছি না । তারা কেমন আছে , তারা ভালো না খারাপ পথে চলছে তাও আমি জানি না।”
রাজা সুরথ বললেন “ যে আত্মীয় ও স্ত্রী পুত্রেরা ধন লোভে আপনাকে পরিত্যাগ করল তাদের জন্য আপনার মন এত স্নেহাসক্ত হচ্ছে কেন ?”
সমাধি বৈশ্য বললেন “ আপনি আমার সম্পর্কে ঠিক বলেছেন । কিন্তু আমি আমার মনকে নিষ্ঠুর করতে পারছি না । বরং তাদের প্রতি আমার মন আরো আসক্ত হচ্ছে । তাদের জন্য আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে । আমি আমার মনকে নিষ্ঠুর করতে পারছি না ।”
রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য এরপর মেধস্ মুনিকে প্রনাম জানিয়ে বললেন – “ হে ভগবন , আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করি । আপনি কৃপা করে তার উত্তর দিন । আমার মন আমার নিজের বশীভূত নয় । সেজন্য আমার হারানো রাজ্যাদিতে এখনও আমার মমতা আছে । আমি এও জানি যে এই হারানো মমতা দুঃখের কারন । কিন্তু এমন জানা সত্ত্বেও আমার হারানো রাজ্য ও রাজ্যের অঙ্গ গুলির জন্য আমার যে আসক্তি বা মমতা থেকে গেছে এর কারণ কি ? এই সমাধি বৈশ্য কেও তার স্ত্রী ও পুত্রেরা তাঁর ধন থেকে বঞ্চিত করেছে । তাঁর অমাত্য কর্মচারীরা তাকে বর্জন করেছে , আত্মীয় স্বজন রাও তাকে ছেড়ে চলে গেছে । কিন্তু তবুও ইনি সেই তাদের প্রতি একান্তভাবেই আসক্ত । এই ভাবেই ইনি ও আমি উভয়েই খুব দুঃখিত হয়েছি । কারণ স্ত্রী- পুত্র – রাজ্যাদি বিষয়ে দোষ দেখেও তাদের প্রতি আমাদের মন মমতায় আকৃষ্ট হয়ে আছে । হে মহামতি , আমারও এরকম জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই মোহ কি জন্য ? এইরকম মূঢ়তা বিবেকহীন লোকেদেরই হয়ে থাকে ।”
মেধস্ ঋষি বললেন – “ হে মহাভাগ , সকল প্রাণীরই রূপ , রস , প্রভৃতি সম্পর্কিত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বিষয়ে জ্ঞান আছে এবং সে সব বিষয় সমূহ কিভাবে তাদের জ্ঞান গোচর হয় তা আপনাদের বলছই
পেঁচা বা তার মত প্রানী দিনের বেলায় দেখতে পায় না । তারা অন্ধ হয়ে থাকে । আবার কাক বা তার মতো প্রানী রাতের বেলায় দেখতে পায় না । আবার অনেক প্রানী দিন রাত সর্বদা অন্ধ থাকে । আর বিড়ালের মতো প্রানী দিন রাত সব সময় দেখতে পায় । একথা সত্য যে মানুষের বিষয় জ্ঞান আছে । কিন্তু তাদেরই শুধু বিষয় জ্ঞান আছে – একথা ঠিক না । কারণ পশু পাখী হরিণ , মাছ সকল প্রাণীরই বিষয় জ্ঞান আছে , মানুষেরও তেমনি বিষয় জ্ঞান আছে । আবার মানুষের যে রকম বিষয়ে জ্ঞান আছে পশু পাখীদেরও সেরকমই আছে । আহার , নিদ্রা প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞান পশু- পাখী এবং মানুষ উভয়েই সমান ।
দেখুন পাখীরা যে খাবার সংগ্রহ করে তাই তাদের শাবকের মুখে তুলে দেয় । এর ফলে তারা খেলেও তাদের ক্ষুধার নিবৃত্তি হয় না । একথা আমরা যেমন জানি বুঝি তেমনি পাখীরাও বুঝে । অথচ সব জেনে বুঝেও তারা শস্যকণা তাদের শাবক দের মুখে তুলে দিতে কত আগ্রহ । হে নরশ্রেষ্ঠ , এই মানুষ দের ক্ষেত্রে আবার দেখছেন না , তারা ভাবে তাদের সন্তান ভবিষ্যতে তাদের প্রত্যুপকার করবে ; সেই লোভে তারা তাদের সন্তান দের প্রতি কতই না অনুরক্ত হয় ? তবুও সংসারের স্থিতি কারিনী মহামায়ার প্রভাবে জীব গণ মোহ রুপ গর্তে এবং মমতা রুপ আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে । এই মহামায়াই জগতের অধিপতি বিষ্ণুর যোগনিদ্রা স্বরুপিনী । তার দ্বারাই এই সারা জগত মোহিত হয়ে আছে । সুতরাং এ বিষয়ে আশ্চর্য হওয়া উচিত নয় । এমনকি সেই দেবী ভগবতী মহামায়ার প্রবল প্রতাপ থেকে জ্ঞানবান বা বিবেক সম্পন্ন মানুষেরও রেহাই নেই । সেই মহামায়া তাদের চিত্তকে জোর করে আকর্ষণ করে মোহের দ্বারা আবৃত করে রাখেন । অতএব যারা সাধারন মানুষ তারা যে তার মোহপাশে আবদ্ধ থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কি ?
সেই মহামায়া এই সমস্ত চরাচর জগত কে সৃষ্টি করেছেন । তিনি প্রসন্না হলে তাঁরই কৃপায় মানুষ মুক্তিলাভ করে থাকে । সেই মহামায়াই সংসার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় । তিনিই পরমা ব্রহ্মবিদ্যারূপিণী ও সনাতনী । তিনি সংসার বন্ধনের কারন স্বরুপিনী অবিদ্যা এবং তিনি ব্রহ্মা , বিষ্ণু প্রভৃতি সকল ঈশ্বরের ঈশ্বরী ,অধিশ্বরী । ”
এই কথা শুনে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য জিজ্ঞেস করলেন – “ হে ভগবন , আপনি যাঁকে মহামায়া বলছেন – সেই দেবী কে? তিনি কি রুপে উৎপন্না হন ?
সেই মহামায়ার স্বভাব কি রকম ? তাঁর স্বরূপ কি রকম ? এবং যে জন্য তেনার আবির্ভাব হয় তা আমি আপনার থেকে শুনতে ইচ্ছা করি ।”
মুনি বলিলেন – “ সেই মহামায়া নিত্যা । এর অর্থ তার জন্ম নেই । মৃত্যু নেই । আবার এই জগত প্রপঞ্চ তাঁরই বিরাট মূর্তি । তিনি সর্বত্রই বিরাজমানা । তিনি নিত্যা । তাও তাকে বহুবার আবির্ভূত হতে হয়েছে ও হতে হয় । আমি আপনাদের কাছে সেই কথা বলছি । আপনারা তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন ।”
( মধু কৈটভ বধ )
(শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধ )
শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই দানব ছিল । তারা প্রজাপতি ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করলেন । খুশি হয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা বর দিতে আসলেন । ২ দানব বর চাইলো যে , কোন পুরুষ যেনো তাদের বধ করতে না পারে । ব্রহ্মা তাদের তাই বর দিলেন ।
এর পর সেই দুই অসুর মহা ভয়ানক অত্যাচার আরম্ভ করল । তার সাথে যোগ দিল চণ্ড ও মুণ্ড নামক ২ অসুর । রক্তবীজ নামক আর এক অসুর এসে যোগ দিল । রক্তবীজ ব্রহ্মার কাছে বর পেয়েছিলেন যে তার রক্ত মাটিতে যেখানেই পরবে সেখানেই দ্বিতীয় রক্তবীজ তৈরি হবে ।
অসুর দের অত্যাচারে ধর্ম কর্ম লোপ পেল । মুনি ঋষি দের কারাগারে বা তাদের বধ করা হল । অনেক কন্যা রা দানব দের হাতে লাঞ্ছিতা হলেন । অনেক রাজা তাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করল । এভাবে পৃথিবী বিজয় হলে অসুর রা বিশাল সেনা নিয়ে স্বর্গ আক্রমণ করল । দেবতা আর অসুর দের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হল । দেবতারা পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে পলায়ন করলেন । স্বর্গে অসুরদের অধিকার কায়েম হল । পরাজিত দেবগণের দুঃখের সীমা থাকল না। আর ব্রহ্মার বর এর জন্য বিষ্ণু বা মহেশ্বর কেঊ ওই অসুরদের বধ করতে পারবেন না । ভাবতে ভাবতে দেবতাদের মাথায় এল , ভগবতী বর দিয়েছিলেন যে , বিপদে তাকে স্মরণ করলেই তিনি আবির্ভূতা হবেন । ভাবামাত্র দেবতারা হিমালয় এ গিয়ে দেবীর স্তব করতে লাগলেন ।
দেবতাদের স্তব
“ দেবীকে , মহা দেবীকে প্রনাম । সতত কল্যাণময়ী দেবী শিবাকে সতত প্রনাম করি । সৃষ্টিশক্তিরুপিনী ভদ্রাকে প্রনাম । আমরা একাগ্র চিত্তে তাঁকে বার বার প্রনাম করি । রৌদ্রাদেবীকে , নিষ্ঠদেবীকে প্রনাম , গৌরী দেবীকে , জগদ্ধাত্রী দেবীকে প্রনাম করি । জ্যোৎস্নারুপিনী , চন্দ্ররুপিনী মুখস্বরূপাকে সতত প্রনাম করি । কল্যাণীকে প্রনাম করি । বুদ্ধিরুপা ও সিদ্ধিরুপাকে পুনঃ পুনঃ প্রনাম করি , অলক্ষ্মীরূপা , রাজগণের লক্ষ্মীরূপা এবং শিবশক্তিরুপিনী তোমাকে বার বার প্রনাম করি । দুস্তর ভবসাগর পারকারিনী দুর্গাদেবীকে প্রনাম করি । যিনি সারভূতা , সর্বজননী , খ্যাতিরুপিনী এবং যিনি কৃষ্ণাবর্না ও ধুম্রবর্ণা সেই দেবীকে সতত ভক্তি ভরে প্রনাম করি । যিনি বিদ্যা রুপে অতি সৌম্যা এবং আশ্রয়রুপিনী ও ক্রিয়ারুপিনী দেবীকে বারবার প্রনাম করি । যে দেবী সকল প্রানীতে বিষ্ণুমায়া নামে শব্দিতা বা অভিহিতা হন , তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে বুদ্ধিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে নিদ্রারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকলভূতে ক্ষুধারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে ছায়ারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকলভূতে শক্তিরুপে অধিষ্ঠিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে বিষয় বাসনা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সকল প্রানীতে ক্ষমা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে জাতিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে লজ্জারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে শান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে শ্রদ্ধারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে কান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে লক্ষ্মী রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে বৃত্তি বা জিবীকা রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে স্মৃতিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে দয়ারুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে তুষ্টি রুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে মাতৃরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যে দেবী সর্বভূতে ভ্রান্তিরুপে অবস্থিতা তাঁকে প্রনাম , তাঁকে প্রনাম , প্রনাম , প্রনাম । যিনি সমস্ত প্রানীর মধ্যে ইন্দ্রিয়গনের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারুপে বিরাজিতা এবং যিনি ক্ষিতি , অপ্ , তেজ , মরুৎ ও ব্যোম , পঞ্চভূতের প্রেরায়িত্রী , সেই বিশ্ব ব্যাপিকা দেবীকে পুনঃ পুনঃ প্রনাম করি । যিনি চিৎশক্তি রুপে এই সারা জগত জুড়ে অবস্থান করছেন তাকে প্রনাম প্রনাম প্রনাম । ”
এই ভাবে দেবতারা দেবী ভবানীর স্তব করতে লাগলেন । সে সময় সেখানে দেবাদিদেব মহেশ্বরের পত্নী ভগবতী পার্বতী তাদের সামনে দিয়ে গঙ্গা স্নানের জন্য যাচ্ছিলেন । দেবী তাদের স্তব শুনে বললেন – “ আপনারা এখানে কার স্তব করিতেছেন ? ”
সেই সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে তার মতন দেখতে আর এক জন দেবী বের হয়ে আসলেন । সেই নব আবির্ভূতা দেবী জানালেন – “ ইহারা আমারাই স্তব করিতেছেন ।”
এই দেবীই আদ্যাশক্তি জগত মাতা অম্বিকা মহামায়া । তিনি দেবী পার্বতীর কোষ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন বলে তার এক নাম কৌষিকী । কথিত আছে এর পর নাকি দেবী পার্বতী কৃষ্ণবর্ণা হয়ে যান । এবং তিনি কালিকা নামে প্রসিদ্ধা হলেন ।
দেবতারা দেবী মহামায়ার কাছে অসুর দের অত্যাচার এর কথা বিস্তারে জানালেন । দেবী অম্বিকা তাদের অভয় দিয়ে জানালেন , তিনি অসুর দের নাশ করবেন ।
দেবী হিমালয়ে সিংহ পৃষ্ঠে বসে মধু পান করতে লাগলেন । সে সময় চণ্ড আর মুণ্ড নামক দুই দানব দেবীকে দেখতে পেলেন । চন্ড মুন্ড একথা গিয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ কে জানালেন । শুম্ভ , নিশুম্ভ সেই নারীর রুপ বর্ণনা শুনে সেই নারীকে পাবার জন্য আকুল হল । নারী লোলুপতা , কামান্ধতা আসুরিক প্রবৃত্তির আর একটি লক্ষণ । শুম্ভ নিশুম্ভ সেই নারীকে পাবার জন্য সুগ্রীব নামক এক অসুর কে পাঠালো । ঠিক হল সুগ্রীব সেই নারী কে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসবে ।
সুগ্রীব হিমালয়ে সেই পর্বত চূড়ায় গিয়ে দেবীকে শুম্ভ নিশুম্ভের পরাক্রম , ঐশ্বর্য এর কথা বলে বিবাহের প্রস্তাব দিল । দেবী শুনে ঈষৎ হাস্য করে বললেন –
“ শুম্ভ ত্রিভুবনের অধিপতি এবং নিশুম্ভ তারই মতো বীর । কিন্তু এ বিষয়ে আগেই আমি আমার অল্প বুদ্ধিবশতঃ যে প্রতিজ্ঞা করেছি , তার অন্যথা করি কি করে ? আমার প্রতিজ্ঞাটি শোন – যিনি আমাকে যুদ্ধে জয় করবেন , যিনি আমার দর্পচূর্ণ করবেন – এবং যিনি জগতে আমার তুল্য বলশালী হবেন – তিনিই আমার স্বামী হবেন । অতএব মহাসুর শুম্ভ অথবা নিশুম্ভ এখানে এসে আমাকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে শীঘ্র আমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করুন এ বিষয়ে আর দেরীর কি দরকার ?”
দূত জানালেন এটি নিছক উপহাস মাত্র । শুম্ভ ও নিশুম্ভ এর মতো মহা পরাক্রমী ব্যাক্তি আপনার মতো দুর্বলা , অবলা নারীর সাথে কিভাবে যুদ্ধ করবেন ? আপনি চলুন নচেৎ পরে আপনাকে অপমান করে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাবে ।
দেবী জানালেন – “ আমি বিচার বুদ্ধি করে প্রতিজ্ঞা করিনি । অতএব তুমি ফিরে গিয়ে তোমার রাজা শুম্ভাসুর কে সব জানাও । তারপর তিনি যা উচিত মনে করবেন – তাই করবেন ।”
( ধুম্রলোচন বধ )
শুম্ভ ও নিশুম্ভ তার দূত সুগ্রীব এর মুখে এসব কথা শুনে অতিশয় ক্রুদ্ধ হলেন । অসুররাজ শুম্ভ তখন তার সেনাপতি ধুম্রলোচন কে আদেশ দিলেন – “ তুমি নিজ সৈন্যে পরিবৃত হয়ে সেই গর্বিতা নারীকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসো । আর যদি তোমাকে কেউ এ কাজে বাধা দেয় , তাহলে সেই বাধা দানকারী কে তখুনি বধ করবে ।”
এখানে বলা প্রয়োজন নারী অপহরণ একটি আসুরিক প্রবৃতি । আর কোন নারীকে কেশ আকর্ষণ করে নিয়ে আসা আর একটি আসুরিক প্রবৃতি । দুঃশাসন একবস্ত্রা রজঃস্বলা দ্রৌপদী কে কেশ আকর্ষণ করে রাজসভায় নিয়ে এসেছিল । এই পাপেই গোটা কৌরব কূল ধ্বংস হয় । নারী নির্যাতন কারীকে ঈশ্বর ও ক্ষমা করেন না । যাই হোক , ধুম্রলোচন ষাট হাজার সৈন্য নিয়ে দেবীকে আনতে গেল ।
ধুম্রলোচন দেবীকে কাছে গিয়ে বললেন – “আজ যদি আপনি নিজের ইচ্ছায় আমার প্রভু শুম্ভের নিকট না যান তবে আমি আপনাকে কেশ আকর্ষণ করে বলপূর্বক নিয়ে যেতে বাধ্য হব ।”
দেবী বললেন – “ তুমি দৈত্যরাজ শুম্ভ দ্বারা প্রেরিত , বলবান ও সৈন্য পরিবৃত । তুমি যদি আমাকে এভাবে জোর করে নিয়ে যাও , তাহলে আমি আর তোমাকে কি করতে পারি ?”
দেবীর এই কথাই শুনে ধুম্রলোচন দেবীকে ধরতে গেলো । দেবী এই দেখে এক হুঙ্কার দিলেন । সেই হুঙ্কার এই ধুম্রলোচন ভস্ম হয়ে গেল । এর পর দেবীর বাহন পশুরাজ সিংহ প্রচন্ড গর্জন করে কেশর দুলিয়ে অসুর সেনা গনের মধ্যে প্রবেশ করল । তার পর আচরে কামড়ে অসুর দের রক্ত মাংস খেতে লাগল । কাউকে মাথা ছিন্ন করল , কারোর হাত পা বিচ্ছিন্ন করল , কারোর উদর ছিড়ে রক্ত মাংস ভক্ষণ করল , কারোর গোটা শরীর শত টুকরো করে দিল । এভাবে একা সিংহ সমস্ত অসুরদের বিনাশ করল ।
( চণ্ড ও মুন্ড বধ )
শুম্ভ ও নিশুম্ভ সব শুনে অতিশয় বিস্মিত হলেন । কারন এক নারীর পক্ষে ধুম্রলোচন এর মতো মহাবীর কে বধ করা সাধারন ব্যাপার নয় । তারা চণ্ড ও মুন্ড নামক ২ দানব কে পাঠালেন ।
চন্ড ও মুণ্ড বহু সেনা , অশ্ব , রথ , হাতী নিয়ে যুদ্ধে আসল । তারা হিমালয়ের চূড়ায় হাস্যরত দেবী অম্বিকা কে দেখতে পেলেন । দেবী চন্ডিকা তাদের দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধা হলেন । ক্রোধে তার বদন মণ্ডল কৃষ্ণবর্ণা হল । দেবী ভ্রুকূটি কুঞ্চিত করলেন । তখন দেবীর ললাট থেকে এক বিকট দর্শনা দেবী প্রকট হলেন । সেই দেবী কালিকা । তিনি বিচিত্র নর কঙ্কাল ধারিনী , নরমুণ্ড মালিনী , ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা , অস্থি চর্মসার দেহ স্বরূপা । অতি ভীষনা , বিশাল বদনা , লোলজিহ্বা , ভয়ঙ্করী , কোটর গতা , আরক্ত চক্ষু বিশিষ্টা এবং সিংহ নাদে দিক মণ্ডল পূর্ণ কারিনী ।
সেই ভয়ংকরা দেবী ভীষন হুঙ্কার দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন । সেই দেবী প্রচুর অসুর সেনাকে মূঠে মূঠে তুলে চিবিয়ে খেতে লাগলেন । অসুরেরা যত অস্ত্র দেবীর পানে নিক্ষেপ করল , দেবীর শরীরে লাগতেই অস্ত্র গুলো ভেঙ্গে যেতে লাগল । দেবী হাজারে হাজারে অসুর সেনাদের ভক্ষণ করতে লাগলেন । রথ , অশ্ব , হাতী গুলোকে ধরে মুখে নিয়ে তা চিবিয়ে খেতে লাগলেন । রক্তে তার দন্ত গুলি লাল হয়ে গেল । কত গুলি অসুরকে দেবী তার চরণ ভারে পিষে বধ করলেন । কোন কোন অসুর দেবীর খড়গের আঘাতে মারা গেল । আবার কিছু অসুর দেবীর দাতে চর্বিত হয়ে মারা গেলো । যুদ্ধক্ষেত্রে এই ভাবে দেবী অসুর দের ধ্বংস করে ফেললেন ।
এ দেখে চণ্ড অসুর হাজার হাজার চক্রাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেবীকে আচ্ছন্ন করে ফেললেন । বাণের প্রভাবে সূর্য ঢাকা পড়ল । দেবী তখন তার খড়গ তুলে ‘হং’ শব্দ করে চন্ডের দিকে ধেয়ে গেল । দেবী চন্ডের চুলের মুঠি ধরে এক কোপে চণ্ডের শিরোচ্ছেদ করে ফেললেন । চন্ড অসুর বধ হল ।
চন্ড নিহত হয়েছে দেখে ক্রোধে মুন্ড দেবীর দিকে ধেয়ে গেলো । দেবী তার রক্তাক্ত খড়গ দিয়ে আর এক কোপে মুন্ড এর শিরোচ্ছেদ করলেন । এভাবে মুণ্ড বধ হল । বাদবাকী জিবীত অসুর রা এ দেখে ভয়ে পালালো । দেবতারা আনন্দে দেবীর জয়ধ্বনি করলেন ।
দেবী চন্ড আর মুণ্ড এর ছিন্ন মস্তক নিয়ে দেবী মহামায়ার কাছে এসে বিকট অট্টহাসি হেসে বললেন – “ এই যুদ্ধরূপ যজ্ঞে আমি আপনাকে চন্ড ও মুন্ড নামে দুই মহাপশুর মস্তক উপহার দিলাম । এখন আপনি নিজেই শুম্ভ ও নিশুম্ভ কে বধ করবেন ।”
দেবী অম্বিকা মধুর স্মরে বললেন – “ হে দেবী , যেহেতু তুমি চন্ড ও মুণ্ডের বধ করে মাথা দুটি আমার নিকট নিয়ে এসেছো , সেজন্য আজ থেকে তুমি জগতে ‘চামুন্ডা’ নামে বিখ্যাত হবে ।”
( রক্তবীজ বধ )
ইতিমধ্যে দেবীর ইচ্ছায় মহেশ্বর দূত হয়ে অসুর দের বোঝাতে গেলেন । দেবী শিবশম্ভু কে দূত হিসাবে পাঠালেন বলে দেবীর এক নাম হল শিবদূতী । মহাদেব অসুর দের অনেক বোঝালেন কিন্তু অসুর রা শুনলো না । অসৎ ব্যাক্তি কখনো ধর্ম কথা শোনে না । চন্ড ও মুন্ডের নিধন সংবাদ পেয়ে শুম্ভ ও নিশুম্ভ ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল ।
শুম্ভাসুরের আদেশে ৮৬ জন প্রধান দৈত্য তাদের সেনা সহ , কম্বু বংশ জাত ৮৪ জন দৈত্য তাদের সেনা সহ , কোটিবীর্য নামে অসুর দের ৫০ টি বংশ , ধুম্র বংশের অসুর দের ১০০ বংশ সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করল । কালক , দৌ্হৃরদ , মৌর্য , কালকেয় অসুর রা যুদ্ধে প্রস্থান করল ।
অসুর দের পদভরে পৃথিবী কাপতে লাগল । ধূলা বালি উড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ঘোড়া রথ ছুটে চলল । হস্তীবাহিনীর পদ চাপে মেদিনী দুলতে লাগল । অসুর রা বিবিধ বাজনা , দুন্দভি , শিঙা বাজিয়ে নানা ভাবে গর্জন করে প্রানঘাতক অস্ত্র গুলি নাচাতে নাচাতে চলল । ঘন ঘন রনদামামা , রনভেরী বাজতে লাগল ।
অসুর দের আসতে দেখে দেবী মহামায়া শঙ্খধ্বনি , ঘণ্টাধ্বনি করতে লাগলেন । তার ধ্বনি দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ল । দেবীর ধনুষ্টঙ্কার এ চারপাশ কেপে উঠল । পশুরাজ সিংহ ঘন ঘন কেশর ও লেজ দুলিয়ে ভয়ানক গর্জন করতে লাগলেন ।
এসময় ব্রহ্মার থেকে হংসযুক্ত বিমানে জপমালা ও কমুন্ডল নিয়ে দেবী ব্রহ্মাণী আসলেন । মহেশ্বর এর থেকে ষাঁড় এর পীঠে চেপে ত্রিশূল নিয়ে আসলেন । তার পরনে ব্যাঘ্রচর্ম , কপালে অর্ধচন্দ্র , অঙ্গে সর্প । দেবীর নাম মহেশ্বরী । কার্তিক এর থেকে দেবী কৌমারী দেবী প্রকট হয়ে আসলেন , যিনি ময়ূরবাহনা ও হস্তে তির আর ধনুক । শ্রী নারায়নের থেকে প্রকট হয়ে আসলেন বৈষ্ণবী শক্তি , যার হাতে চক্র , শঙ্খ , গদা , পদ্ম , ধনুক-বান , খড়গ । ইনি গরুর পক্ষী বাহনা । বারাহী দেবী আসলেন । নারসিংহী দেবী আসলেন । তারপর ১০০ চক্ষু বিশিষ্টা হস্তী বাহনা ঐন্দ্রী দেবী বজ্র নিয়ে আসলেন । শিবদূতী ও কালিকা দেবী আসলেন ।
রক্তবীজ প্রচুর সৈন্য সামন্ত নিয়ে আসলে দেবী মহামায়া , কালিকা কে বললেন – “ আমার প্রীতির জন্য আপনি সত্বর অসুর দের বিনাশ করুন ।”
দেবী কালিকার থেকে অসংখ্য দেবীগণের সৃষ্টি হল । অসুর রা এসে দেবী কালিকা কে বাণ দ্বারা আছন্ন করলে দেবী ভীষণ তান্ডব শুরু করলেন । তিনি তার তীব্র খড়গ দ্বারা দানব দের শিরোচ্ছেদ করতে লাগলেন , চরণে পিষ্ট করে বধ করতে লাগলেন , কাউকে আবার গিলে খেয়ে ফেললেন । দেবী মহামায়া চক্র শূল , বাণ , খড়গ , গদা , কুঠার দ্বারা অসুর দের ধ্বংস করতে লাগলেন ।
ব্রহ্মাণী দেবী কমুন্ডল এর জল ছিটিয়ে অসুর দের ভস্ম করতে লাগলেন । বৈষ্ণবী দেবী চক্র দিয়ে অসুর দের টুকরো টুকরো করে দিলেন । তাঁর গদার আঘাতে অসুর রা রক্তবমি করতে করতে মারা গেল । রথ , অশ্ব , হস্তী গুলো ধ্বংস হল । কৌমারী দেবীর ভীষন বানবৃষ্টি তে অসুর দের দেহ গুলো টুকরো টুকরো হতে লাগল । ঐন্দ্রী দেবীর বজ্র প্রহারে অসুরেরা ভস্ম হতে লাগল । বারাহী দেবী তার তীক্ষ্ণ দন্তের দ্বারা অসুর দের ছিড়ে ফেলতে লাগলেন । নারসিংহী দেবী তার নখ দ্বারা অসুর দের ছিন্নবিচ্ছিন্ন করলেন । শিবদূতী দেবীর অট্টহাস্যে অসুর রা মূর্ছিত হলে দেবী সেই মূর্ছিত অসুর দের গিলে খেলেন । দেবীর বাহন সিংহ অসুর দের আঁচরে কামরে শেষ করতে লাগলেন ।
রক্তবীজ এ দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে আসলেন । । রক্তবীজ ব্রহ্মার কাছে বর পেয়েছিলেন যে তার রক্ত মাটিতে যেখানেই পরবে সেখানেই দ্বিতীয় রক্তবীজ তৈরি হবে । রক্তবীজ প্রথমেই দেবী ঐন্দ্রীর সাথে যুদ্ধ করলেন । ঐন্দ্রী দেবীর ব্জ্রপ্রহারে ক্ষতবিক্ষত হলে তার শরীর থেকে অনেক বিন্দু রক্ত পড়ে আরো রক্তবীজ এর সৃষ্টি হল । এভাবে অনান্য দেবী দের অস্ত্রের আঘাতে রক্তবীজ রক্তাক্ত হলে অনেক রক্তবীজ এর সৃষ্টি হল । দেবতারা এ দেখে খুব ভয় পেলেন ।
দেবী অম্বিকা তখন কালিকাকে বললেন – “ হে চামুন্ডে , তুমি শীঘ্র তোমার বদন বিস্তৃত কর । এবং তোমার ওই বিস্তৃত মুখ দিয়ে আমার শস্ত্রের আঘাতে রক্তবীজের শরীর থেকে যে রক্তবিন্দু ঝরবে তা খেয়ে ফেলবে । সেই সঙ্গে ওই রক্তবিন্দু থেকে জন্মলাভ করা অসুর দের খেতে খেতে তুমি সারা যুদ্ধক্ষেত্র ঘুরে বেড়াও । তাহলেই এই রক্তবীজ দৈত্য ক্রমশঃ রক্তশূন্য হয়ে পড়বে । আর তাতেই তার ক্ষয় বা মৃত্যু হবে । পরন্তু তুমি দৈত্যদের খেয়ে ফেলতে থাকলে আর উগ্র দৈত্যদের জন্ম হবে না । ”
দেবী অম্বিকা এই বলে নিজের শাণিত ত্রিশূল দিয়ে রক্তবীজ কে আঘাত করলেন । দেবী কালিকা রক্তবীজের রক্ত খর্পর ( করোটি ) এ নিয়ে পান করলেন । এই ভাবে অম্বিকার ত্রিশুলে রক্তবীজ ভীষন ভাবে আহত হল । তার এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পরল না । দেবী কালিকা তার সমস্ত রক্ত পান করলেন । এভাবে রক্তবীজ এর সমস্ত রক্ত দেবী কালিকা পান করলে রক্তবীজের মৃত্যু হল ।
এর পর দেবী কালিকা সমস্ত যুদ্ধখেত্র ঘুরে বেড়ালেন আর রক্তবীজ এর দেহ থেকে সৃষ্টি হওয়া অনান্য রক্তবীজ দের খড়গ দ্বারা শিরোচ্ছেদ করে তাদের রক্ত পান করতে লাগলেন । রক্তপান করতে করতে দেবী ভয়ানক হয়ে উঠলেন । তাহার জিহ্বা ও দন্ত রক্তবর্ণ হল । এভাবে সমস্ত রক্তবীজ দের নাশ হল । দেবী কালিকার অট্টহাস্যে চারিদিক পরিপূর্ণ হল । দেবীর হাতে অসুর , হস্তী , অশ্ব , রথ ধ্বংস হতে লাগল ।
শেষে এমন হল দেবী কালিকা পলায়মান অসুর দের বধ করে তাদের রক্ত পান করতে লাগলেন । দেবী মহামায়ার ডাকেও তিনি ফিরলেন না । দেবতাগন দেবীকে শান্ত করার জন্য অনেক স্তব স্তুতি করলেও দেবী শান্ত হলেন না । উপায় না দেখে দেবগণ মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন । মহাদেব শব রুপ হয়ে দেবী কালিকার যাত্রাপথে শুয়ে থাকলেন । দেবী কালিকা মহাদেব কে দেখতে পেলেন না । তিনি তাঁর ডান চরণ মহাদেবের বুকে রাখলেন । যখন তিনি নীচে তাকিয়ে দেখলেন স্বয়ং স্বামী মহাদেব , তখন তিনি লজ্জায় তার জিহ্বা বের করলেন ।এর পর দেবী কালিকা শান্ত হলেন।
thanks dada, shortly Sri Sri Chandi kotha bolar jonno.
ReplyDeletethove. Mohisasur bod 2ber 2babe bornona hoyar karon bujte pari nai, jodi akto clear korten..
Devi r chorono soto-sohosro pronam.
apnak o pronam dada.