ॐ सभा-য় আপনাদের জানাই স্বাগতম <> Facebook Page www.facebook.com/omsabha <> Facebook Group www.facebook.com/groups/OmSabha <> Blog,Page,Group থেকে বিনা অনুমতিতে লেখা নিলে আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। <> সকল স্বত্ব ॐ सभा -র দ্বারা সংরক্ষিত ।

Wednesday, May 29, 2013

শ্রী নিত্যগোপালদেব (জ্ঞানানন্দ অবধূত) : অবতারকল্প দিব্যাত্মা

শ্রী রামকৃষ্ণের সম সাময়িক এক বাঙালি হিন্দু সাধক নিত্য গোপাল দেব (এঁর কথা "রামকৃষ্ণ কথা মৃতে" আছে । ঠাকুর এঁকে সম্মান করতেন)
শ্রী নিত্যগোপালদেব
শ্রী নিত্যগোপালদেব(জ্ঞানানন্দ অবধূত)  : অবতারকল্প দিব্যাত্মা
---------------------------------------------------------------
 শ্রী নিত্যগোপালদেব ১২৬১ বঙ্গাব্দের ১৩ চৈত্র বাসন্তী অষ্টমীতে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পানি হাটিতে আবির্ভূত হন। আড়াই বছর বয়স থেকেই তাঁর নির্বিকল্প সমাধি হত। শৈশবেই মাতামহীর নিকট থেকে তিনি তাঁর দীক্ষামন্ত্র লাভ করেছিলেন। বাল্যে ২ জন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব তাঁকে গৌরাঙ্গ রূপে দর্শন করেছিলেন। উত্তরকালে তাঁকে কেউ কালী, কেউ কৃষ্ণ, কেউ শিব , কেউ দুর্গা প্রভৃতি রূপে দর্শন করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে কালী ঘাটে গুরু পূর্ণিমার দিন তিনি ব্রহ্মানন্দ অবধূতের নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এরপর ৬ বছর ধরে কৈলাস সহ বহু তীর্থ ভ্রমন করেন। তবে কাশী, কলকাতা ও নবদ্বীপে তিনি লীলা জীবনের অধিক কাল কাটিয়েছেন। অধুনা লুপ্ত কাশী স্থিত প্রাচীন "মহা নির্বাণ" মঠ ১৩০১ -এ তিনি কলকাতায় পঞ্চ ক্রোশী কালী ঘাটের অন্তর্গত রাসবিহারী এভিনিউ তে পুনঃ স্থাপিত করেন। এর শাখা বাংলার নানা স্থানে আছে। ১৩১৭ সালে তাঁর দেহ ত্যাগের পর এই স্থানেই তাঁকে ,তাঁর ইচ্ছা ক্রমে সমাহিত করা হয়।

নিত্য গোপাল ছিলেন জ্ঞান -কর্ম - ভক্তি -প্রেমের সমন্বয় মূর্তি।বেদোক্ত ব্রহ্ম, তন্ত্রোক্ত মহাশক্তি , পুরাণোক্ত ভগবান কে লাভ করবার নানা পথকে তিনি সমান মর্যাদা দিয়েছেন এই বলে," ঈশ্বর পুরীর নানা দ্বার। সেই পুরীর এক একটি দ্বার এক এক সাম্প্রদায়িক মত। ঈশ্বর পুরীতে প্রবেশ করিতে হইলে যে কোন সাম্প্রদায়িক দ্বার দ্বারাই প্রবেশ করা যায়।" অধাত্ম পিপাসু কোন ব্যাক্তি -ই তাঁর কাছ থেকে বিমুখ হত না। নারী- পুরুষ, হিন্দু- অহিন্দু ,ধনী-দরিদ্র ---সকলকেই তিনি আশ্রয় দিতেন। এমনকি পতিত, ঘৃণিত,পাপী নারী পুরুষ -ও তাঁর কৃপা থেকে বঞ্চিত হয় নি।

আজকাল যে ভারতবাসী স্বদেশের স্বধর্ম চর্চা ভুলে বিদেশের পরধর্ম নিয়ে মাতামাতি করছে , তার সূচনা সেই কালেই হয়েছিল। সে সম্পর্কে তাঁর মত ," আর্য শাস্ত্রের অগ্রে সামঞ্জস্য করে , পরে পৃথিবীর শাস্ত্র এক কর।" শাস্ত্র সমুদ্রের কত টুকু নিতে হবে সে বিষয়ে বলেন," অত্যুত্তম আম্রের ত্বক প্রভৃতি পরিত্যাগ করিতে হয়। আমরা জগতের সকল শাস্ত্রের সার গ্রাহী।" এই ভাবনা থেকে তিনি কোরান ,বাইবেল -ও চর্চা করতেন।একদা তিনি মুসলমান শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, যার মুসল অর্থাৎ ঈশ্বরে ইমান বা পূর্ণ আস্থা আছে ,পৃথিবীতে সেই মুসলমান।যার ঈশ্বরে আস্থা নেই --সেই নাস্তিক -ই মাত্র অমুসলিম। এই বিরাট বিচারে কৃষ্ণ ভক্ত, খ্রিস্ট ভক্ত, আল্লাহ ভক্ত, প্প্রকৃতি পুজক আদিবাসী সকল আস্তিক-ই মুসলমান। মুস্লিমগন যদি এই সূত্র অবলম্বন করে সমুদায় মানব জাতিকে উদার ভাবে গ্রহণ করতে পারত , যদি তারা অপরের আধ্যাত্মিকউপাসনা পদ্ধতির বিভিন্নতা ও সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নিত ,তাহলে মুসলিম জাতি ও ইসলাম সকলের বরণীয় হয়ে উঠত।মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসবাদের দ্বারা নয়,প্রেম দ্বারাই সভ্যতাকে জয় করা যায়।কিন্তু , দুর্ভাগ্যের কথা বিশ্বের প্রায় কোন মুসলমান -ই ভগবৎপাদ নিত্যগোপালের এই বার্তা আজো গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।


বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, বিবেকানন্দ প্রমুখ মহাপুরুষ ও ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের মত অবতার পুরুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। বিশেষ করে রামকৃষ্ণের সাথে তাঁর মধুর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। ঠাকুরের সাথে নিত্য গোপালের প্রথম সাক্ষাৎ কার দক্ষিণেশ্বরে হয়। তার বর্ণনা তাঁর জীবনী থেকে দিচ্ছি।
"ঠিক এই সময় ত্রৈলোক্য বিশ্বাস ও তাঁহার মাতার কালী বাড়ী দখল সম্বন্ধে বাহিরে একতা মহা দাঙ্গা হাঙ্গামা উপস্থিত হওয়ায় রামচন্দ্র ,মন মোহন প্রভিতি বাহিরে গেলেন। কিন্তু নিত্য গোপালকে উদাসিন ভাবে সেখানে উপবিষ্ট থাকিতে দেখিয়া শ্রী রাম কৃষ্ণ পরম হংস দেব বলিলেন ,"তুমি গেলে না?" ...তিনি উদাশ হইয়া উত্তর দিলেন,"দেহের ভিতরের হাঙ্গামাই মিটাইতে পাড়া যায় না । বাহিরের হাঙ্গামা আর কি দেখব ? সংসারি লোকের এমন হাঙ্গামা প্রায়-ই ঘটে থাকে ।"শ্রী পরমহংস ইহা শুনিয়া অত্যন্ত আশ্চর্য হইলেন এবং নিত্য গোপাল দেবের প্রতি এক দ্রিস্তে চাহিয়া রহিলেন। ... রামচন্দ্র প্রভিতি ভক্ত গন ফিরিয়া আসিলে ,তিনি আনন্দে বলিয়া উঠিলেন, "নিত্য টি অন্তঃ সার বিশিষ্ট আমের মত ।...নিত্য কত বড় পড়ে বুঝতে পারবে।"


আর একবার দক্ষিনেস্বরে সমাধিস্থ নিত্য গোপাল কে স্পর্শ করে ঠাকুর -ও সমাধিস্থ হলেন। সমাধি হতে ,অর্ধ বাহ্য দশায় এসে দুজনে ভাবাবেশে অ লৌকিক ভাষায় কথা বলতে লাগলেন।, যা কোনও ভক্তই বুঝতে পারছিলেন না। ঠাকুর কিছু পড়ে বাহ্য দশায় ফিরলেও নিত্য গোপাল পূর্ববত রইলেন। এ দেখে ---
" কেহ কেহ বলিলেন যে ,"আপনার দর্শন ও কৃপা প্রভাবে ইহার এরুপ সমাধি লাভ হয়েছে। পরমহংস দেব জিব কাটিয়া বলিলেন," রাম! রাম ! একথা মুখেও আনিস না। ও যে নিত্য সিদ্ধ, শম্ভু। স্বয়ম্ভূ। নিত্য কারো কৃপার অপেক্ষা রাখে না। "পরে সমাধি ভঙ্গ হলে নিত্য গোপালের গলা জড়িয়ে ঠাকুর বল্লেন,""নিত্য শঙ্কর, পরম হংস,অব ধূত । নিত্য বলেই এ অবস্থায় কোমরে কাপর রাখতে পারছে।"নিত্য গোপালকে ঠাকুর মাত্র পরমহংস বলে সম্মান দেন নি। তাঁকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর জ্ঞান -ও করতেন। একদা বয়সে বড় ঠাকুর নিত্য গোপালকে প্রণাম করলে ,নিত্য গোপাল -ও পুনঃ পুনঃ প্রতি নমস্কার করেন ও ঠাকুরের এই কাজের কারন জানতে চান । উত্তরে তিনি বলেন,
"তুই যে প্রত্যক্ষ নারায়ন। তোকে--- " বলিতে বলিতেই উচ্ছ্বসিত ভাবাবেশে আবিষ্ট হইয়া পড়িলেন। "দেহ ত্যাগের পূর্ব দিবস ঠাকুর নিত্য গোপালকে পুস্পাদি সহ পূজা করেন ও নিত্য গোপালও তাঁকে সেই পূজিত পুস্প দ্বারা পূজা করেন।এর দ্বারা উভয়ের পারস্পরিক শ্রদ্ধার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ঠাকুরের দেহ ত্যাগের পর তাঁর দেহাবশেষ নিয়ে যখন রামকৃষ্ণ ভক্ত মণ্ডলীতে বিবাদ হয় ,তিনি মধ্যস্থ করে তাঁর- ই বাগান বাড়ী কাঁকুড় গাছি যোগউদ্যানে রামকৃষ্ণের অস্থি কলস স্থাপন করেন।

ঠাকুরের প্রয়ানের পর-ও বহুদিন নিত্য গোপাল দেহে ছিলেন। এই সময় রামকৃষ্ণ কথামৃতের নতুন সংস্করনে নিত্য গোপালের প্রতি ঠাকুরের একটি বক্তব্য"নিত্য তুইএসেছিস? আমিও এসেছি"এই বানীটি বাদ দেয়া হয়। রামকৃষ্ণ মণ্ডলীর এক অংশের চাপে এই পরিবর্তন করা হয়েছিল। কারন ওই অংশের মনে হয়েছিল , ঠাকুরের ওই বক্তব্যে নিত্য গোপালের সাথে ঠাকুরের মহিমার অভিন্নতা প্রতিপাদিত হয়ে যেতে পারে। এই চাপের কথা জেনে নিত্য গোপাল উষ্মা প্রকাশ করেন । পরে রামকৃষ্ণ কথামৃতের নতুন সংস্করনে আবার ওই অংশ ফিরে আসে।

নিত্য গোপাল ঠাকুরের মতই নিজ ভক্ত মণ্ডলীতে ঈস্বরাবতার রূপে পূজ্য ছিলেন।
নারী সম্পর্কে ঠাকুর ও নিত্য গোপাল দুজনেই উদার ভাবাপন্ন ছিলেন। উভয়েই মহিলা ভক্তদের সাথে অবাধে আলাপ করতেন।এতে তাঁদের কারো পতন হয় নি। মহাপুরুষ বা অবতারগন সময় সময় নিজেদের কে উপলক্ষ করে ভক্ত ,অনুগামীদের শিক্ষা দেন ।নিত্য গোপাল কে নারী বিষয়ে সতর্ক করে ঠাকুর বাস্তবিক পক্ষে ভক্তদের সাবধান করছেন। কথাম্রিতকার -ও তাই বললেন, “সাধু সাবধান” -- ভক্তেরা এই মেঘগম্ভীরধ্বনি শুনিতেছে। "

নিত্য গোপাল বলছেন," সাধনার এক অবস্থায় ধন, সম্ভ্রম ও যুবতী অনিষ্টের কারন হইতে পারে। সিদ্ধ মহাপুরুষের ওই তিন কিছুতেই অনিষ্ট করিতে পারে না! ...যিনি আত্মাতে রমন করেন করেন তাঁহার সামান্য ললনাতে রমন করিবার ইচ্ছা হইবে কেন? ...পরম হংস সম্পূর্ণ নির্বিকল্প। তিনি কিছুতেই রত নহেন। ... যুবতী মণ্ডলীর মধ্যে থাকিলেও তাঁহার কোন ক্ষতি হয় না। "

অধুনা লুপ্ত কাশী স্থিত প্রাচীন "মহা নির্বাণ" মঠ ১৩০১ -এ তিনি কলকাতায় পঞ্চ ক্রোশী কালী ঘাটের অন্তর্গত রাসবিহারী এভিনিউ তে পুনঃ স্থাপিত করেন। এর শাখা বাংলার নানা স্থানে আছে। ১৩১৭ সালে তাঁর দেহ ত্যাগের পর এই স্থানেই তাঁকে ,তাঁর ইচ্ছা ক্রমে সমাহিত করা হয়। 
সূত্র : শ্রী শ্রী নিত্য গোপাল চরিতামৃত , মহানির্বাণ মঠ

Debasish Singha

Like your page
https://www.facebook.com/OmSabha


No comments:

Post a Comment

Facebook Comment

আজকের তারিখ