ॐ सभा-য় আপনাদের জানাই স্বাগতম <> Facebook Page www.facebook.com/omsabha <> Facebook Group www.facebook.com/groups/OmSabha <> Blog,Page,Group থেকে বিনা অনুমতিতে লেখা নিলে আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। <> সকল স্বত্ব ॐ सभा -র দ্বারা সংরক্ষিত ।

Thursday, May 30, 2013

হিন্দুধর্মের সীমানা


[ 'প্রবুদ্ধ ভারত', এপ্রিল, ১৮৯৯

আমাদের প্রতিনিধি লিখিতেছেন, অন্য ধর্মাবলম্বীকে হিন্দুধর্মে আনা সম্বন্ধে স্বামী বিবেকানন্দের মতামত জানিবার জন্য সম্পাদকের আদেশে স্বামীজীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়াছে। আমরা বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠের পোস্তার নিকট নৌকা লাগাইয়াছি। স্বামীজী মঠ হইতে নৌকায় আসিয়া আমার সহিত কথাবার্তা কহিতে আসিলেন। গঙ্গাবক্ষে নৌকার ছাদে বসিয়া তাঁহার সহিত কথোপকথনের সুযোগ মিলিল।

আমিই প্রথমে কথা বলিলাম, ‘  স্বামীজী, যাহারা হিন্দুধর্ম ছাড়িয়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদিগকে হিন্দুধর্মে পুনর্গ্রহণ-বিষয়ে আপনার মতামত কি জানিবার জন্য আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছি । আপনার কি মত, তাহাদিগকে আবার গ্রহণ করা যাইতে পারে ? ’



স্বামীজী বলিলেন, নিশ্চয়। তাহাদের অনায়াসে গ্রহণ করা যাইতে পারে, করা উচিতও।


তিনি মুহূর্তকাল গম্ভীরভাবে চিন্তা করিয়া বলিতে আরম্ভ করিলেন

'আর এক কথা তাহাদিগকে পুনর্গ্রহণ না করিলে আমাদের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পাইবে। যখন মুসলমানেরা প্রথমে এদেশে আসিয়াছিলেন, তখন প্রাচীনতম মুসলমানের ঐতিহাসিক ফেরিস্তার মতে ভারতে ৬০ কোটি হিন্দু ছিল, এখন আমরা বিশ কোটিতে পরিণত হইয়াছি। আর, কোন লোক হিন্দুসমাজ ত্যাগ করিলে সমাজে শুধু যে একটি লোক কম পড়ে তাহা নয়, একটি করিয়া শত্রু বৃদ্ধি হয়!                                                 

' তারপর আবার হিন্দুধর্মত্যাগী মুসলমান বা খ্রীষ্টানের মধ্যে অধিকাংশই তরবারিবলে ঐ সব ধর্ম গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছে, অথবা যাহারা ইতিপূর্বে ঐরূপ করিয়াছে, তাহাদেরই বংশধর। ইহাদিগের হিন্দুধর্মে ফিরিয়া আসিবার পক্ষে নানারূপ আপত্তি উত্থাপন করা বা প্রতিবন্ধকতা করা স্পষ্টতই অন্যায়। আর যাহারা কোনকালে হিন্দুসমাজভুক্ত ছিল না, তাহাদের সম্বন্ধে কি আপনি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন?  দেখুন না, অতীতকালে এইরূপ লক্ষ লক্ষ বিধর্মীকে হিন্দুধর্মে আনা হইয়াছে আর এখনও সেরূপ চলিতেছে।

' আমার নিজের মত এই যে, ভারতের আদিবাসিগণ, বহিরাগত জাতিসমূহ এবং মুসলমানাধিকারের পূর্ববর্তী আমাদের প্রায় সকল বিজেতৃবর্গের পক্ষেই ঐ কথা প্রযুক্ত হইতে পারে। শুধু তাহাই নহে, পুরাণসমূহে যে-সকল জাতির বিশেষ উৎপত্তির বিষয় কথিত হইয়াছে, তাহদের সম্বন্ধেও ঐ কথা খাটে। আমার মতে তাহার অন্যধর্মী ছিল, তাহাদিগকে হিন্দু করিয়া লওয়া হইয়াছে।
যাঁহারা ইচ্ছাপূর্বক ধর্মান্তর গ্রহণ করিয়াছিল, কিন্তু এখন হিন্দুসমাজে ফিরিয়া আসিতে চায়, তাহাদের পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত-ক্রিয়া আবশ্যক, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু যাহাদিগকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হইয়াছিলযেমন কাশ্মীর ও নেপাল অনেককে দেখা যায়, অথবা যাহারা কখন হিন্দু ছিল না, এখন হিন্দুসমাজে প্রবেশ করিতে চায়, তাহাদের পক্ষে কোনরূপ প্রায়শ্চিত্ত-ব্যবস্থা করা উচিত নহে।

সাহসপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলাম, 'স্বামীজী, কিন্তু ইহারা কোন্ জাতি হইবে? তাহাদের কোন-না-কোনরূপ জাতি থাকা আবশ্যক, নতুবা তাহারাকখন বিশাল হিন্দুসমাজের অঙ্গীভূত হইতে পারিবে না। হিন্দুসমাজে তাহাদের যথার্থ স্থান কোথায়?’

স্বামীজী ধীরভাবে বলিলেন,যাহারা পূর্বে হিন্দু ছিল, তাহারা অবশ্য তাহাদের জাতি ফিরিয়া পাইবে। আর যাহারা নূতন, তাহারা নিজের জাতি নিজেরাই করিয়া লইবে।

তিনি আরও বলিতে লাগিলেন,স্মরণ রাখিবেন, বৈষ্ণবসমাজে ইতিপূর্বেই এই ব্যাপার ঘটিয়াছে এবং অহিন্দু ও হিন্দুধর্মের বিভিন্ন জাতি হইতে যাহারা ধর্মান্তর গ্রহণ করিয়াছিল, সকলেই বৈষ্ণব সমাজের আশ্রয় লাভ করিয়া নিজেদেরই একটা জাতি গঠন করিয়া লইয়াছিল, আর সে-জাতি বড় হীন জাতি নহে, বেশ ভদ্র জাতি। রামানুজ হইতে আরম্ভ করিয়া বাঙলাদেশে শ্রীচৈতন্য পর্যন্ত সকল বড় বড় বৈষ্ণব আচার্যই ইহা করিয়াছেন।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এই নূতন যাহারা আসিবে, তাহাদের বিবাহ কোথায় হইবে ?

স্বামীজী স্থিরভাবে বলিলেন, এখন যেমন চলিতেছে, নিজেদের মধ্যেই।

আমি বলিলাম, তারপর নামের কথা। আমার বোধ হয়, অহিন্দু এবং যে-সব স্বধর্মত্যাগী অহিন্দু নাম লইয়াছিল, তাহাদের নূতন নামকরণ করা উচিত। তাহাদিগকে কি জাতিসূচক নাম বা আর কোনপ্রকার নাম দেওয়া যাইবে ?’


স্বামীজী চিন্তা করিতে করিতে বলিলেন, অবশ্য নামের অনেকটা শক্তি আছে বটে।
কিন্তু তিনি এই বিষয়ে আর অধিক কিছু বলিলেন না। কিন্তু তারপর আমি যাহা জিজ্ঞাসা করিলাম, তাহাতে তাঁহার আগ্রহ যেন উদ্দীপ্ত হইল।

প্রশ্ন করিলাম-'স্বামীজী, এই নবাগন্তুকগণ কি হিন্দুধর্মের বিভিন্নপ্রকার শাখা হইতে নিজেদের ধর্মপ্রণালী নিজেরাই নির্বাচন করিয়া লইবে অথবা আপনি তাহাদের জন্য একটা নির্দিষ্ট ধর্মপ্রণালী নির্বাচন করিয়া দিবেন?'



স্বামীজী বলিলেন, এ-কথা কি আবার জিজ্ঞাসা করিতে হয়?তাহারা আপনাপন পথ নিজেরাই বাছিয়া লইবে। কারণ নিজে নির্বাচন করিয়া না লইলে হিন্দুধর্মের মূলভাবটিই নষ্ট করা হয়। আমাদের ধর্মের সার এইটুকু যে, প্রত্যকের নিজ নিজ ইষ্ট-নির্বাচনের অধিকার আছে। '

আমি এই কথাটি বিশেষ মূল্যবান্ বলিয়া মনে করিলাম। কারণ আমার বোধ হয়, আমার সম্মুখস্থ এই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা বৈজ্ঞানিকভাবে ও সহানুভূতির দৃষ্টিতে হিন্দুধর্মের সাধারণ ভিত্তিসমূহের আলোচনায় অনেক দিন কাটাইয়াছিলাম আর ইষ্ট-নির্বাচনের স্বাধীনতারূপ তত্ত্বটি এত উদার যে, সমগ্র জগৎকে ইহার অন্তর্ভুক্ত করা যাইতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Facebook Comment

আজকের তারিখ