ধর্ম বহু হয় না। মত বহু হয়।
মতুয়া মত- ও তেমন ১ টি মত এবং তা সনাতন হিন্দু ধর্মের অংশ । মতুয়া মতের বহু কথাই সনাতন হিন্দু ধর্মের হরিচাদ পূর্ব বর্তী নানা সাধক জীবন ও শাস্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায় ।এই প্রসঙ্গে জাতিভেদ প্রথা ও হরিচাঁদ -গুরু চাঁদ ঠাকুরের মত সম্পর্কে কিছু কথা বলছি।
কোন প্রাচীন উপনিষদ ও বেদে জাতিভেদ নেই, নারীর ও শুদ্রের বেদ মন্ত্রে , যজ্ঞে অধিকার হীনতার কথা নেই। শ্রদ্ধেয় দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ সংক্রান্ত রচনাগুলি পাঠ করলেই এ সংক্রান্ত ভুল ধারনার অবসান ঘটবে ।
অবশ্য অর্বাচীন ১ টি উপ্নিশদে ও কিছু স্মৃতি শাস্ত্রে নারী ও শূদ্রের বিরুদ্ধে কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে । সেই সঙ্কীর্ণ বক্তব্য গুলির বিরুদ্ধে বুদ্ধ , মহাবির, নানক, চৈতন্য , আড়বাড় গন, তুকারাম,কবির,রুহিদাস , প্রমুখ সাধক ও অবতার কল্প মহাজন গন নানা বক্তব্য দিয়েছেন ও এই সব সঙ্কীর্ণ প্রথার বহুল অবসান ঘটিয়ে বেদ বিহিত মানবতাবাদ তথা সনাতন হিন্দু ধর্ম -এর প্রসার করেছেন। এই বিরাট সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হরিচাদ গুরুচাদ ঠাকুরের অবদান কে চিন্তন করা দরকার।এই ভাবে বিচার করলে দেখা যাবে যে এই দুই সংস্কারক গত শতকের আকস্মিক কোন সৃষ্টি নন। বরং তাঁরা সনাতন হিন্দু ধর্মের কয়েক হাজার বছরের ধারাবাহিক সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল।
একথা তাই বলাই যায় , মতুয়া মত সনাতন হিন্দু ধর্মের সংস্কার পন্থী , উদার , আধুনিক মত বিশেষ। আর্য সমাজ, যোগদা সৎ সঙ্গ সোসাইটি , ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম,জগদ্বন্ধু -এর সংস্থা, রামকৃষ্ণ মিশন ,যোগী রাজ শ্যামাচরন মিশন, আর্ট অব লিভিং,পতঞ্জলি যোগ সমিতি ইত্যাদি আধুনিক হিন্দু সংস্থাও মতুয়াদের মতই এইসব সামাজিক কুপ্রথার অনেক গুলির অবসান ঘটিয়ে হিন্দু ধর্ম ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।
বিশ্বের অন্য প্রান্তের জন্ম সূত্রে অহিন্দু জনতা এবং হিন্দু ধর্ম থেকে একদা বিচ্যুত এই উপ মহাদেশের অহিন্দুরা এদের প্রচারণার ফলে আজ তাই সনাতন হিন্দু ধর্মের ছত্র ছায়ায় ফিরে আসছে। হিন্দু ধর্মের এই নব জাগরণের সময় মতুয়া সহ আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মতালম্বি হিন্দু গোষ্ঠী গুলির উচিত পারস্পরিক বিবাদ বন্ধ করে শ্রদ্ধা ও প্রীতির মাধ্যমে হিন্দু সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
হরি ওঁ। ঈশ্বর সকল কে শুভ বুদ্ধি দিন।
লেখক ঃ দেবাশীষ সিংহ (www.facebook.com/sridebasishsingha)
No comments:
Post a Comment